বাংলাদেশের ১০টি ক্ষুদ্র কুটির শিল্পের তালিকা
বাংলাদেশের ১০টি ক্ষুদ্র কুটির শিল্পের তালিকা ,আপনি কি কুটির শিল্প সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন? তাহলে এই আর্টিকেলটি আপনার জন্য। আজকে আমরা আপনাদেরকে জানাবো, কুটির শিল্প কি এবং কুটির শিল্প কোনগুলো বিস্তারিত জানতে আর্টিকেলটি পড়তে থাকুন।
বাংলাদেশের ক্ষুদ্র কুটির শিল্পের মাধ্যমে অল্প পুঁজিতে আপনি কি স্বাবলম্বী হতে চান? তাহলে আপনাকে জানতে হবে, কোন শিল্পগুলো নিয়ে কাজ করলে অতি সহজেই ঘুরে দাড়াতে পারবেন। এই আর্টিকেলটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়লে জানতে পারবেন, বাংলাদেশের ১০টি ক্ষুদ্র কুটির শিল্পের তালিকা।
পোস্ট সূচীপত্রঃ বাংলাদেশের কুটির শিল্পের তালিকা জানতে পড়ুন
- বস্ত্রশিল্প
- কুটির শিল্প নিয়ে কিছু তথ্য
- কুটির শিল্পের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস
- কুটির শিল্প প্রকৃতির সাথে সম্পর্ক
- বাঁশ-বেশ শিল্প
- শীতলপাটি শিল্প
- নকশিকাঁথা শিল্প
- পাটজাত শিল্প
- কাঁসা-পিতল শিল্প
- গহনা শিল্প
- মৃৎ শিল্প
- লেখকের শেষ কথা
কুটির শিল্প নিয়ে কিছু তথ্য
কুটির শিল্প বাংলাদেশের ইতিহাস ঐতিহ্যবাহী একটি শিল্প। আপনি যদি কুটির শিল্প গড়তে চান, তাহলে আপনার ১০-১৫ জনের বেশি কারিগর লাগবে না । ২০১০ শিল্পনীতিতে বলা হয়েছে, জমি এবং কারখানা ব্যতিরেখে স্থায়ী সম্পদ সর্বচ্চ ৪ লক্ষ টাকা নিচে এবং পারিবারিক জনবল ৮-১০ এর অধিক নয় এমন শিল্পগুলোই হচ্ছে কুটির শিল্প। আপনারা অল্প পরিসরে কুটির শিল্প করতে পারেন।কেন না অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের মত কুটির শিল্পে বড় পুঁজি লাগেনা বলে সহজেই এই ব্যবসা করা যায়।
কুটির শিল্পের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস
কুটির শিল্প মূলত শুরু হয় বিশ্ব-বিখ্যাত মুসলিম কাপর উৎপাদনের মধ্যে দিয়ে। মুঘল থেকে ব্রিটিশ যুগ পর্যন্ত সূতিবস্ত্র উৎপাদন ছিল মূলত এই অঞ্চলের কুটির শিল্প। যখন দেশ ভাগাভাগি হয়ে গেলো তখন থেকে কুটির শিল্পের আমদানি এবং রপ্তানি কমে গেলো। ১৯৫৭ সালে আইন পাশ করে এ শিল্পের নামকরণ হয় পূর্ব পাকিস্তান ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প সংস্থা।
পরবর্তীতে মুক্তিযুদ্ধের পর এই সংস্থার নাম করণ করা হয় বাংলাদেশ ক্ষুদ্র কুটির শিল্প করপোরেশন।বাংলাদেশের কুটির শিল্পগুলো- বস্ত্রশিল্প,পাটজাত শিল্প,শীতলপাটি শিল্প,বাঁশ-বেত শিল্প,মৃৎ শিল্প,গহনা শিল্প,নকঁশি কাথা শিল্প,কাঁসা পিতলজাত শিল্প ইত্যাদি।
আরো পড়ুনঃ ২০টি লাভজনক ব্যবসা আইডিয়া ২০২৪- ব্যবসা করার টিপস
কুটির শিল্প প্রকৃতির সাথে সম্পর্ক
কুটির শিল্প মূলত প্রাকৃতিক উপাদান এবং উপস্থিত পরিবেশের সাথে সম্পর্কিত। তাই কুটির শিল্প অক্সিজেন ফরেস্টের অংশ হতে পারে। তাছাড়া পরিবেশ সংরক্ষণে কুটির শিল্প গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। পরিবেশ রক্ষায় কুটির শিল্পের ভূমিকা অপরিসীম।বাংলাদেশের ১০টি ক্ষুদ্র কুটির শিল্পের তালিকা জানতে নিচে পড়তে থাকুন।
কুটির শিল্পে-তাঁত শিল্প
বাংলাদেশের ইতিহাস ঐতিহ্য সংস্কৃতির জন্য তা ছিল খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাঁতশিল্প হলো কাপড় তৈরির প্রাচীন একটি শিল্প। তাঁত শিল্পে তাঁতের ধাগা ব্যবহার করে মানুষের শরীরের বস্ত্র, গামছা, তুশ পরিহিত বস্ত্রগুলো, নমীত কাপড়-চোপড় গুলো সাধারণত তৈরি করা হয় যার খুবই গুরুত্ব রয়েছে। বাংলাদেশের ইতিহাস ঐতিহ্য তাঁত শিল্প এখনো বড় ভূমিকা পালন করে আছে। তাঁতশিল্প বাংলাদেশের ১০টি ক্ষুদ্র কুটির শিল্পের তালিকা মধ্য অন্যতম।কুটির শিল্পে সেলাই শিল্পগুলো চাহিদা জানতে নিচে পড়ুন।
কুটির শিল্পে-সেলাই শিল্প
বাংলাদেশের ১০টি ক্ষুদ্র কুটির শিল্পের তালিকা মধ্য সেলাই শিল্প অন্নতম। কুটির শিল্পে সেলাই শিল্পগুলো বাংলাদেশের ঐতিহ্য বহন করে। বর্তমানে সেলাই শিল্পের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। বর্তমান যুগ অনলাইনের যুগ হওয়ায়, সেলাই শিল্পের চাহিদা দিন দিন ব্যাপক পরিমাণে বাড়ছে। ফেলাই শিল্প হল সুতার মাধ্যমে বস্ত্র,লেঙ্গা, চাদর, ইত্যাদি বস্ত্রগুলোর উপর নকশা করা। সেলাই মূলত হাতের মাধ্যমে করা হয় বস্ত্রের নকশার উপর ভিত্তি করে। আপনি যদি বস্ত্রজাত শিল্প সম্পর্কে জানতে চান তাহলে নিচে পড়ুন।
আরো পড়ুনঃ বর্তমান সময়ে সবচেয়ে লাভজনক ব্যবসা ২০২৪- ব্যবসার আইডিয়া
কুটির শিল্পে- বস্ত্রশিল্প
বাংলাদেশের ১০টি ক্ষুদ্র কুটির শিল্পের তালিকার মধ্য বস্তশিল্প ঐতিহ্য বহন করে থাকে। আমাদের দেশে বস্ত্রজাত শিল্পের মধ্যে রয়েছে, লুঙ্গি, শাড়ি,তোয়াল, গামছা,ধুতি, মশাড়ি ইত্যাদি যা আমাদের নিত্যদিনের জন্য ব্যবহৃত হয়। এছাড়াও রয়েছে উন্নতমানের মসলিন,জামদানী, টাঙ্গাইলের শাড়ি,পাবনার শাড়ি, রেশমবস্ত্র,কাতান, খদ্দর বস্ত্র যাহা দেশের চাহিদা পূরণ করেও বিশ্ব বাজারে
স্থান দখল করে আছে আমাদের বস্ত্র শিল্প।বস্ত্রশিল্প বর্তমানে ই-কমার্সের মাধ্যমে দ্রুত এগিয়ে জাচ্ছে। ই-কমার্সের মাধ্যমে মানুষ অতি সহজেই পণ্য সঠিক সময়ে সহজেই হাতের মুঠোয় পাচ্ছে। তাই বস্ত্রশিল্পের প্রতি কুটির শিল্পের কারিগররা আশাবাদী। কেননা তারা সঠিক মূল্য পাচ্ছে।
বাঁশ-বেত শিল্প
বাংলাদেশের ক্ষুদ্র কুটির শিল্প মানুষের দৈনন্দিন কাজে ব্যবহারের জন্য বাঁশ বেত শিল্পের মাধ্যমে বেড়া,চাটাই,মাছ ধরার ফাঁদ,হাত পাখা,মোরা,ফুলদানি,ছাইদানি ইত্যাদি তৈরী করা হয়। যা পরিবারের চাহিদা মিটিয়েও গ্রাম গঞ্জের বাজারেও বিক্রি করে অর্থ ইনকাম করা যায়। বেতের মোরা সৌখিনতা মানুষদের অনেক প্রিয়।অনেকে প্লাস্টিকের পণ্যর চেয়ে বেতের পণ্য ব্যবহার করতে। বেতের পণ্য যেমন দেখতে যেমন সুন্দর তেমনি আরাম দায়ক। বাঁশ দিয়ে যেমন অনেক কিছু তৈরী করা যায় তেমন বাঁশের দামের পরিমানটাও অনেক।
আরো পড়ুনঃ চাকরির পাশাপাশি বাড়তি আয় করার উপায়- বাড়তি আয়ের আইডিয়া
শীতলপাটি শিল্প
বাংলাদেশের ক্ষুদ্র কুটির শিল্পের মধ্য শীতলপাটি হলো একটি কারু শিল্প। মূলত এটি বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী শিল্প। শীতলপাটি শিল্পটি আবহমান গ্রাম বাংলার প্রকৃতি, রূপ ও সৌখিনতা কে ধরে রেখেছে। নিজেদের চাহিদা পূরণের পরেও বাজারের এর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।বিশেষ করে সৌখিন প্রিয় মানুষদের৷শীতলপাটি এখন দেশের বিভিন্ন জেলাতেই পাওয়া যায়। কেননা কুটির শিল্পের পণ্য শুধু নিজের ব্যবহারের জন্য রেখেও ভালো দাম পাওয়াতে বাজারেও বিক্রয় করা যায়।
কুটির শিল্পে-নকশিকাঁথা শিল্প
বাংলাদেশের ১০টি ক্ষুদ্র কুটির শিল্পের তালিকার মধ্য নকঁশিকাথা শিল্প শুধু বর্তমান নয়, সেই প্রাচীণ কাল থেকেই নকঁশিকাথা তৈরী হয়ে আসছে এবং এর ব্যাপক চাহিদাও রয়েছে। বর্তমানে নকঁশিকাথা একটি লাভ জনক ব্যবসাতে পরিনিত হয়েছে।আমাদের দেশে তিন ধরনের কাথা তৈরী হয়- পাইড় কাঁথা,মাটিকাঁথা,বিচিত্রকাঁথা। পরিবারের চাহিদা পূরণ করেও তৈরীকৃত নকশিকাঁথা অনেক বেশি দামে বিক্রি করা যায়।
আমাদের দেশের অনেক মানুষ বিশেষ করে নারীরা এই কাজের সাথে বেশি সম্পৃক্ত। বর্নাতমানে নারীরা নকশিকাঁথা নিয়ে অনেকটা আশাবাদী। কেননা অনলাইনের বিভিন্ন উদ্দ্যেক্তা কন্টেন্ট তৈরীর মাধ্যমে প্রচার করছে। আর এই প্রচারের ফলে দিন দিন মানুষের চাহিদা বাড়ছে। কেননা অনলাইনে অর্ডার করলে উদ্দ্যেক্তারা পণ্য সহজেই মানুষের দ্বারে পৌঁছিয়ে দিচ্ছে।
পাটজাত শিল্প
বাংলাদেশের ক্ষুদ্র কুটির শিল্পে পাটকে বাংলাদেশের সোনালী আঁশ বলা হয়। পাটজাত পণ্য অত্যান্ত সুন্দর এবং সাবলীল হয়। পাট দিয়ে অনেক কিছু বানানো হয় যেমন- ব্যাগ,সিকা,কার্পেট,হ্যান্ড ব্যাগ,টেবিল ম্যাট,শতরঞ্জি ইত্যাদি। এসব পণ্য পারিবারিক ভাবে তৈরী করে বিক্রয় করে স্বাবলম্বী হওয়া যায়। আমাদের দেশের অনেক মানুষ এই পাটজাত পণ্য পারিবারিক ভালো তৈরী করছে এবং বাজারে বিক্রি করছে।
কাঁসা-পিতল শিল্প
বাংলাদেশের বিভিন্ন যায়গাতে কাঁসা পিতল তৈরী করা হয়। যা দেশের সব জেলাগুলো তে সরবরাহ করা হয়। কাঁসা পিতল মূলত ঢাকার ধামরাই,সাভার, চাঁপাইনবাবগঞ্জ,জামালপুরের ইসলাম পুর,টাঙ্গাইল, রংপুর,শরিয়তপুর, ইত্যাদি আরো অনেক যায়গাতে তৈরী হয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে অবস্থা সম্পর্ণ এবং সৌখিনতা মানুষ এসব ব্যবহার করে থাকে।
আরো পড়ুনঃ মাশরুমের ১৫ টি ঔষুধিগুণ- মাশরুম খাওয়ার পদ্ধতি
কুটির শিল্পে-গহনা শিল্প
শুধু বাংলাদেশ কেন বিশ্বের সব দেশের নারীদের পছন্দ গহনা সামগ্রী। গহনা সামগ্রীর মধ্যে রয়েছে, কানপাশা,ঝুমকা,নবরত্ন,নথ, ফুরফুরি ইত্যাদি। গহনা ছোটো পরিসরে পারিবারিক ভাবেও তৈরী করা যায। অনেক পরিবার এসব গহনা তৈরী করে বাজারে বিক্রি করে আসছে। যা থেকে মানুষ স্বাবলম্বী হচ্ছে। বাংলাদেশের ১০টি ক্ষুদ্র কুটির শিল্পের মধ্য আপনি চাইলে গহণা শিল্প গড়ে তুলতে পারেন।
কুটির শিল্পে-মৃৎ শিল্প
মৃৎ শব্দের অর্থ মাটি। আর এই মাটি দিয়েই তৈরী হয় বিভিন্ন,পুতুল, পাড়ি,পাতিল,কলস,ফুলের টপ,মনশঘট ইত্যাদি। বাংলাদেশের অনেক পরিবার এই শিল্পের সাথে জরিত আছে। যেমন-সিরাজগঞ্জ,টাংগাইল,ফেনি,কুমিলা ইত্যাদি। মৃৎ শিল্প ঘুরে দাড়াচ্ছে কেননা অনলাইন প্লাটফর্ম এসে মানুষ বিভিন্ন কন্টেন্ট তৈরী করে প্রচার করছে। ফলে ই-কমার্স বিজনেসের মাধ্যমে মানুষ সহজেই প্রডাক্ট হাতের মুঠোয় পাচ্ছে।
লেখকের শেষ কথা
উপরোক্ত আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশের কুটির শিল্প গুলো সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে আশা করি বুঝতে পেরেছেন। কুটির শিল্প বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী শিল্প। এই শিল্পের মাধ্যমে গ্রাম-গঞ্জের পরিবারগুলো ঘুরে দাড়াতে পারবে। ইতিহাস ঐতিহ্য,সংস্কৃতি রক্ষায় এই শিল্প ধরে রাখার কোন বিকল্প নেই। চেষ্টা করুন অল্প পরিসরে কুটির শিল্প গড়ার।
মাহবুব আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন
comment url