ই-কমার্স সম্ভাবনায় বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী মৃৎ শিল্প
ই-কমার্স সম্ভাবনায় বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী মৃৎ শিল্প,মানুষের হাতের স্পর্শে মাটি দিয়ে তৈরী দৃষ্টিনন্দন এবং শৈল্পিক কারুকার্য উপাদান হলো মৃৎ শিল্প। মৃৎ শিল্প ব্যবহারে সৌখিনতা রয়েছে। প্রিয় পাঠকগণ ইকমার্স সম্ভাবনা নিয়ে নিচে জানুন।
বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী মৃৎ শিল্প ই-কমার্স সম্ভাবনার ভবিষ্যৎ খুবই উজ্জল। মৃৎ শিল্পের পন্যগুলো একমাত্র ই-কমার্স বিজনেস এর মাধ্যমে সারা দেশব্যাপী এবং আন্তর্জাতিক বাজারে পৌঁছানো সম্ভব। ই-কমার্স সম্ভাবনায় বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী মৃৎ শিল্প গুলো সম্পর্কে জানতে নিচে পড়ুন।
পোস্ট সূচীপত্রঃ ই-কমার্স সম্ভাবনায় বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী মৃৎ শিল্প সম্পর্কে জানতে পড়ুন
- মৃৎ শিল্পের তৈরী জিনিসপত্র
- মৃৎ শিল্পে টাঙ্গাইল
- মৃৎ শিল্পে সিরাজগঞ্জ
- মৃৎ শিল্পের তৈজসপত্রর উপকারিতা
- ঐতিহ্যবাহী মৃৎ শিল্প
- ই-কমার্স সম্ভাবনায় বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী মৃৎশিল্প
- লেখকের শেষ মন্তব্য
ঐতিহ্যবাহী মৃৎ শিল্প
মৃৎ শিল্পের সাথে যারা পরিপূর্ণ ভাবে জরিত তাদের সাধারণত কুমার বলা হয়। এই কাজগুলো যারা করে তাদের পাল পদবী থাকে। এই শিল্পের মাধ্যমে গ্রাম বাংলার মানুষের হাসি, কান্না, সুখ, দুঃখ খুবই সুন্দর ভাবে ফুটিয়ে তুলতে পারে তারা। এমন একটা সময় ছিল যে, এমন কোনো বাড়ি থাকতো না যে সেই বাড়িতে হাড়ি পাতিল পাওয়া যাই তো না। মাটির পাতিল ছাড়া
যেন গ্রামে রান্না হত না। গ্রামের বেশির ভাগ মানুষ মাটির পাতিলে ভাত রান্না করতো এবং পানি রাখার জন্য কলসের ব্যবস্থা থাকতো। যা মাটি দিয়ে তৈরী হত। আর এই মাটির কলসের পানি মানুষ তৃপ্তি নিয়ে খেত। মাটির কলসের পানি গরম কালে ফ্রীজের মত ঠান্ডা রাখে।তখন ফ্রিজ বলে কিছু ছিলনা। গ্রাম বা শহর সব খানেই এই মাটির কলসের উপরেই নির্ভর ছিল।
এখনো বয়স্ক মানুষদের কাছে শোনা যায় মাটির চুলায় ভাত রান্নার স্বাদ এখন বর্তমানে গ্যাসের চুলাতে পাওয়া যায়না। নিত্যদিনের কাজে প্রতিনিয়ত মৃৎ শিল্প ওতোপ্রোতো ভাবে জরিত।
ই-কমার্স সম্ভাবনায় বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী মৃৎশিল্প
ই-কমার্স সম্ভাবনায় বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী মৃৎ শিল্প বর্তমানে এটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে রয়েছে। বর্তমানে বলাই চলে ই-কমার্স ব্যবসায় মৃৎ শিল্পের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল। বর্তমানে ই-কমার্স এর মাধ্যমে সারা দেশব্যাপী এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে মৃত শিল্পগুলো পৌঁছানো সম্ভব।
মৃৎ শিল্পে ই-কমার্স এর সুবিধাঃ
বাজার সম্প্রসারণঃ বর্তমানে ই-কমার্স এর মাধ্যমে মৃৎ শিল্পের পণ্যগুলো প্রত্যন্ত গ্রাম অঞ্চল থেকে সংগ্রহ করে আন্তর্জাতিক বাজার পর্যন্ত পৌঁছানো সম্ভব হচ্ছে। আর সেজন্য মৃৎ শিল্পের ভবিষ্যৎ ধীরে ধীরে উজ্জ্বল হচ্ছে।
খরচ কমানোঃ মৃৎ শিল্প বর্তমান অনলাইন প্লাটফর্মের মাধ্যমে বিক্রেতা ও ক্রেতার মধ্য যোগাযোগ স্থাপন করা যায় বলে মধ্যস্বভোগীদের খরচ অনেক কমে যায়।
বৈচিত্রঃ মৃৎ শিল্পের বিভিন্ন পন্যর ডিজাইন অনলাইনে প্রদর্শন করা যায় বলে ক্রেতা সহজেই পন্যর প্রতি আকৃষ্ট হয়।
বাংলাদেশের মেয়েদের ঐতিহ্য ও সম্ভাবনা কে এবং সৌন্দর্যকে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দিতে ই-কমার্স একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হিসেবে ভূমিকা পালন করতে পারে।
মৃৎ শিল্পের তৈরী জিনিসপত্র
মৃৎ শিল্পের তৈরী বিভিন্ন জিনিস পত্র আমাদের প্রয়োজনে এবং অপ্রয়োজনে নানা কাজে ব্যবহার করে থাকি। আর সেগুলোর নাম নিচে দেওয়া হলো।
- মাটির প্লেট
- মাটির ফুলের টপ
- মাটির কলস
- হাড়ি-পাতিল
- পিঠা তৈরীর ছাচ
- চায়ের কাপ
- মটকা
- কূপবাতি
- প্রদিপ
- জগ-মগ
- সানিক-গ্লাস-বোল
বর্তমানে বাংলাদেশের ২ টি জেলাতে এখনো মৃৎ শিল্পের ঐতিহ্য ধরে রেখেছে সেই জেলা দুটো হলোঃ
- টাঙ্গাইল
- সিরাজগঞ্জ
মৃৎ শিল্পে টাঙ্গাইল
বর্তমানে টাঙ্গাইল জেলার মির্জাপুর,কালিহাতি,বল্লা,নাগবাড়ি,বেতডোবা এবং আরো অনেক যায়গাতে এই মৃৎ শিল্পের ঐতিহ্য ধরে রেখেছে এখনো অনেক পরিবার এই শিল্পের সাথে ওতোপ্রোতো ভাবে জরিত। এবং পেশা হিসাবে এই কাজ করে আসছে। তারা বছরের প্রায় অর্ধেক সময় জিনিস পত্র তৈরী করে করেন।এবং বছরে আর অর্ধেক সময় গ্রামে-গঞ্জে হাট বাজারে
বিক্রি করে থাকেন। কিন্তু কালের বিবর্তনে হারিয়ে জাচ্ছে এই মৃৎ শিপ্ল। এক সময় কুমার পাড়াতে যে মাটির গন্ধ পাওয়া যেত সেগুলো প্রতিনিয়তই কমে জাচ্ছে। এমন অনেক পরিবার এই কাজগুলো ছেরে দিচ্ছে। কেননা তারা যে কাজের সঠিক পারিশ্রমিক পাচ্ছে না।তবে বর্তমানে কিছুটা পরিবর্তনের রূপ দেখা জাচ্ছে। বর্তমানে অনলাইনের মাধ্যমে নিজ জেলা থেকে অন্য জেলাতেও রপ্তানি হচ্ছে।ফলে কিছুটা হলে কুমার পাড়ার মানুষ স্বস্থি পাচ্ছে।
আরো পড়ুনঃ নকশিকাঁথা শিল্প
মৃৎ শিল্পে সিরাজগঞ্জ
সিরাজগঞ্জ জেলার রায়গঞ্জ এবং সলঙ্গা মৃৎ শিল্পের জন্য বিখ্যাত। রায়গঞ্জের ধানগড়া,কাজীপুর,ক্ষুদ্রশিমলা ইত্যাদি যায়গাগুলোতে এখনো অনেক পরিবার এই পেশার সাথে যুক্ত। তারা তাদের ঐতিহ্য এখনো ধরে রেখেছে। তারা নিজ জেলার চাহিদা পূরণের সাথে দেশে বিভিন্ন জেলাতে পণ্য সরবরাহ করে থাকে। অপরদিকে সলঙ্গা পাল পাড়া তে এখনো অনেক কুমার
তাদের কাজ কর্ম নিয়মিত করে জীবিকা নির্বাহ করছে। তবে বর্তমানে শিল্পকলাতে যুক্ত অনেক শিক্ষিত উদ্দ্যেক্তা এই শিল্পকে ধরে রাখার বিষয়ে উদ্যেগ গ্রহন করেছে। তারা এই খাত কে বেছে নেওয়ার ফলে আমাদের এই মৃৎ শিল্পের তৈরী জিনিস পত্র রপ্তানি করছে,আমেরিকা, ইউরোপ,কানাডা,অস্ট্রেলিয়ার মত বিভিন্ন দেশগুলো তে।
মৃৎ শিল্পের তৈজসপত্রর উপকারিতা
- প্লাস্টিকে যে ক্যামিকেল থাকে সেটা শরীর সাস্থ্যের জন্য অনেক ক্ষতিকর। পানি যদি প্লাস্টিকে সংরক্ষন করে রাখা হয় তা দেহের জন্য ক্ষতিকর। কিন্তু মাটির পাত্রের একদম নিরাপদ এবং সাস্থ্যর জন্য কোনো ঝুকি থাকে না।
- মাটির পাত্র পি এইচ লেভেল ঠিক রাখে এবং মাটি ক্ষারজাতীয়।
- খাবার যদি সংরক্ষণ করে রাখা যায় তার স্বাদ পরিবর্তন হয় না।
- মাটির পাত্রের রান্না পুষ্টিগুণ অক্ষুন্ন রাখে।
বর্তমানে মৃৎ শিল্পের জন্য আশার বাণী হয়ে দাড়িয়েছে ই-কমার্স। বর্তমানে ই-কমার্সের মাধ্যমেই এই শিল্পকে তুলে ধরেছে। যেটা ছাড়া অন্য কোনো সমাধান নেই বললেই চলে।যদিও মাটির তৈরী বলে ডেলিভারির সমস্যার সম্মুখীন হতে পারে। তবে সাবধানতা অবলম্বন করলে সমাধান করা সম্ভব।একমাত্র ই-কমার্সের মাধ্যমেই কুমাররা তাদের ঐতিহ্য ফিরে পেতে পারে।
কেননা মানুষ এখন যেমন সচেতন তেমন সৌখিন। এসব বিষয়ে এগিয়ে আসতে কন্টেন্ট ক্রিয়েটারদের কন্টেন্ট তৈরী করে প্রচারে এগিয়ে আসতে হবে।
যে মাটির তৈরি তৈজসপত্রগুলো হারিয়ে যাচ্ছে
মিট শিল্পের তৈরীর জিনিসপত্র গ্রাম বাংলার চিরস্থায়িত্ব ঐতিহ্য। এক সময় প্রচুর পরিমাণে মাটির তৈরি প্রজেক্ট পত্রের ব্যাপক পরিমাণ চাহিদা ছিল এবং এর ব্যবহার সুদূরপ্রসারী ছিল। কিন্তু বর্তমানে আধুনিকতার ছোঁয়ায় কালের বিবর্তনে নিপুণ হাতে তৈরি এই তৈজসপত্রগুলো হারিয়ে যেতে বসেছে। আবহমান গ্রাম বাংলায় এক সময় মাটি তরি তোদের কত তৈরীতে কুমার
পাড়ার মৃৎশিল্পীরা সবসময় ব্যস্ত থাকতো। নিত্য প্রয়োজনীয় ডাবর, মটকি, হাড়ি পাতিল, পিঠা তৈরীর সাজ,ফুলদানি, ঢাকনা,শো-পিস ইত্যাদি তৈরি করতো। কিন্তু কালের বিবর্তনে এসব হারিয়ে যেতে চলেছে।
- মাটির ব্যাংক
- মাটির কলস
- মাটির চুলা
আবহমান বাংলার ঐতিহ্যের ভিতরে একটি গুরুত্বপূর্ণ মির্চি হল মাটির ব্যাংক। নিম্ন আলোচনা করা হলো-
মাটির ব্যাংক
আপনারা অনেকেই কমবেশি মাটির ব্যাংকের সাথে সবাই পরিচিত। ছোটবেলাতে মাটি ব্যাংকে টাকা জমানোর স্মৃতি কমবেশি সকলেরই আছে। কথিত আছে ধাতু মোর্চার প্রচলন হওয়ার পর থেকেই মানুষ মাটির ব্যাংক ব্যবহার করছে। এছাড়া সঞ্চয় করার জন্য বা শখের বসেও এখন অনেক মানুষ মাটির ব্যাংক ব্যবহার করে থাকে। বর্তমানে অনেকে কাগজের টাকাও
জমিয়ে রাখে। ছোটবেলাতে স্কুলে টিফিনের টাকা, ঈদ, পূজার সালামি,বাবার পকেটে খুচরা টাকা, হাঁস মুরগির ডিম বিক্রি ঢাকা, হাতে তৈরি সখের জিনিসপত্র গুলো বিক্রির টাকা, মাটির ব্যাংকের জমা করা হতো। তাই মাটির ব্যাংকের সাথে জড়িয়ে আছে অনেক মিষ্টি স্মৃতি।
মাটির কলস
আমাদের দেশে মাটির কলসের বহুল ব্যবহার ছিল। গ্রাম কিংবা শহরে প্রায় প্রতিটি বাড়িতে ব্যবহার করা হতো মাটির কলস, মাটির থালা, মাটির জগ, মাটির মগ এবং মাটির হাড়ি ইত্যাদি। কিন্তু বর্তমান যুগে এসব পাত্রের ব্যবহার নেই তো বললেই চলে। মাটির পাত্রে রান্না পানি রাখা বেশ উপকারী। মাটির কলেজ গুলো দেখতে যেমন সুন্দর তেমনি এর গুণও রয়েছে। মাটির
পাত্রে প্রাকৃতিকভাবে গরমকালে পানি ঠান্ডা থাকে। এছাড়াও মাটির পাত্র ভিটামিন এবং খনিজ পদার্থ বজায় রাখতে সাহায্য করে থাকে। আর এর ফলে এই পানি পান করলে সানস্ট্রোক হয় না। মাঠের মাটির পাতের পানি স্টিল ব্যালেন্স করার ক্ষমতা রয়েছে যায় শরীরের মেটাবলিজম বাড়াতে বিশেষভাবে সাহায্য করে। লোকালয় থেকে ঐতিহ্যের মাটির কলস দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে। হয়তো একদিন এসব নিয়ে মৃৎ শিল্পের স্থান হবে জাদুঘরে।
মাটির চুলা
মানব জাতির গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার গুলোর মধ্য অন্যতম আবিষ্কার হলো মাটির চুলা। প্রাচীনকালের মানুষরা খরগোড়েতে আগুন জ্বালিয়ে খাবার পুড়িয়ে খেত। সেই ঐতিহাসিক গল্প গুলো আমরা সবাই জানি। আর এরপর মানুষ এক ধাপ এগিয়ে যায় চুলা আবিষ্কারের পর। মাটি তোরে চুলার কথা মনে পড়লেই সাধারণত মনে পড়ে যায় দাদি নানী ও মায়ের হাতে রান্নার কথা।
বর্তমান সময়ে চলে আসছে মাটির চুলার রান্নার ব্যবহার। শহর অঞ্চলে এই চুলার ব্যবহার দেখা যায় না বললেই চলে। গ্রামাঞ্চলে এখনো বেশিরভাগ রান্নার কাজে মাটির চুলা গুলো ব্যবহার করে থাকে। এবং রান্না হাড়ি পাতিল গুলো ধুতে ছায় ব্যবহার করে থাকে। মাটির তৈরী তৈজসপত্র টিকে থাকুক বছর বার বছর। এর ফলে টিকে থাকবে মাটি চুলার পাশে বসে গ্রাম বাংলার স্মৃতিবিজরিত মা চাষীদের সুখ-দুঃখের গল্প।
লেখকের শেষ মন্তব্য
মৃৎ শিল্পে বর্তমানে আশার বাণী দেখা জাচ্ছে। কেননা বর্তমান যুগের সাথে তাল মিলিয়ে ব্যবসা বানিজ্যর প্রসার ঘটছে। বিভিন্ন অনলাইন উদ্দ্যেক্তা তৈরী হচ্ছে কন্টেন্টের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ছে দেশ এবং দেশের বাইরেও। ই-কমার্সের মাধ্যমে মানুষ পণ্যগুলো সহজেই হাতে পাচ্ছে।তাই মৃৎ শিল্পীরা অচিরেই ঘুরে দাড়াবে। আশা করি আর্টিকেলটি পড়ে বুঝতে পেরেছেন।
মাহবুব আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন
comment url