সিরাজগঞ্জ জেলার দর্শনীয় স্থান - বিস্তারিত জানুন

বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলাতে বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান রয়েছে। তারমধ্য দর্শনীয় স্থানের দিক দিয়ে অন্যতম একটা জেলা সিরাজগঞ্জ। সিরাজগঞ্জের দর্শনীয় স্থানগুলো নিচে আলোকপাত করা হলো। পড়তে থাকুন...

বাংলাদেশের সিরাজগঞ্জ জেলার ঐতিহ্যবাহী  দর্শনীয় স্থানগুলোঞ্জ জেনে নিন

বাংলাদেশের উত্তর বঙ্গের একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ জেলা সিরাজগঞ্জ। সিরাজগঞ্জ জেলাটি রাজশাহী বিভাগে অবস্থিত। এই জেলার সীমান্তবর্তী জেলা গুলো পূর্বে টাঙ্গাইল,দক্ষিণে পাবনা, উত্তরে বগুড়া এবং পশ্চিমে নাটোর-রাজশাহী। সিরাজগঞ্জ জেলার প্রধান প্রধান নদীগুলো নদীগুলো হচ্ছে, যমুনা, করতোয়া,গাঢ়দহ,বড়াল,ফুলজোর নদী।সিরাজগঞ্জের প্রশাসনিক সদর দপ্তর সিরাজগঞ্জ। সিরাজগঞ্জ কৃষি এবং বস্ত্র শিল্পের জন্য বিখ্যাত। যমুনা সেতু ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলাকে সংযুক্ত করেছে। সিরাজগঞ্জ জেলাতে সব ধর্মের মানুষ মিলে মিশে বসবাস করে থাকে। 

সিরাজগঞ্জ জেলার পরিচিতি

সিরাজগঞ্জ জেলাটি সিরাজ আলী চৌধুরী নামের এক জমিদারের নাম থেকে উৎপত্তি হয়। বড় একটা ভূমিকম্পে ১৭৬২ সালে যখন যমুনা নদীর গতিপথ পরিবর্তিত হয়ে যায়। তখন নতুন একটা নদীর উৎপত্তি হয়ে যায় আর সেটি হলো বড়াল নদী, আর ওই নদীর তীরের বেশির ভাগ জমিই সিরাজ আলী চৌধুরীর।তার ফল স্বরুপ কালক্রমে তার নাম অনুসারেই সিরাজগঞ্জ জেলা 

নাম পরিচিতি পায়।সিরাজগঞ্জ জেলাটি পাবনা জেলার অন্তর্ভুক্ত ছিল। সিরাজগঞ্জ জেলাটি ১৮৮৫ সালে একটি মহকুমায় উন্নীত হয় এবং সর্বশেষ ১৯৮৪ সালে সিরাজগঞ্জ জেলাটি পরিপূর্ণ জেলাতে পরিনিত হয়। সিরাজগঞ্জ জেলাটি একটি কৃষি প্রধান জেলা।এই জেলাতে পাট,ধান, গম,কালাই ইত্যাদি প্রচুর পরিমানে উৎপাদিত হয়। বানিজ্যিক কেন্দ্র হিসাবে সিরাজগঞ্জ জেলাটিতে রয়েছে পাটকল,চিনিকল,রাইসমিল,বস্ত্রশিল্পসহ বিভিন্ন শিল্পের আভাসস্থল।

সিরাজগঞ্জ জেলার থানার সংখ্যা ১২ টি/ উপজেলা ৯ টি।

  • সিরাজগঞ্জ সদর
  • উল্লাপাড়া
  • শাহজাদপুর 
  • চৌহালি
  • কাজিপুর 
  • কামারখন্দ
  • রায়গঞ্জ
  • বেলকুচি
  • সলঙ্গা
  • এনায়েতপুর
  • বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিম
  • তাড়াশ

সিরাজগঞ্জ জেলার দর্শনীয় স্থানসমূহ

পোস্ট সূচীপত্রঃ দর্শনীয় স্থানসমূহ জান্তেপড়ুন

চলনবিল

চলনবিল বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় এবং বৃহত্তম একটা বিল। চলনবিলটি খাল এবং ছোটো ছোটো বিলের সমন্বয়ে সংযুক্ত। বর্ষাকালে সব খাল এবং বিল এক বিলে পরিনত হয় এবং এর আয়তন হয়ে দাড়ায় ৩.৬৮ বর্গ কিমির এটা জলারাশি। যদিও চলনবিলটি ৩ টি জেলার সমন্বয়ে গঠিত সিরাজগঞ্জ, পাবনা,নটোর নিয়ে।তবে সিরাজগঞ্জ জেলার রায়গঞ্জ এবং তাড়াশ উপজেলার ভিতরে চলনবিলের অংশ পরে। কয়েকটি নদী প্রবাহিত হয় চলন বিলে মধ্যে দিয়ে নদীগুলো হল- আত্রাই,

করতোয়া,বড়াল,চিকনাই,তেলকুপি ইত্যাদি।চলনবিলে প্রচুর পরিমানে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ পাওয়া যায়। আর এই মাছ বিক্রি করে জেলে সম্প্রদায়ের মানুষগুলোতাদের জীবিকা নির্বাহ করে থাকে। নিজ জেলাতে মাছের চাহিদা পূরণ করেও পাশের জেলাগুলোতেও মাছের চাহিদা পূরণ করে থাকে। এগুলোর মধ্যে হচ্ছে- চিতল, কৈ, শিং,মাগুর,পুঁটি,টাকি, বোয়াল, শৈল,চিংড়ি,কালিবাউস,টেংরা,গজার, বৌ,সরপুটি,মৃগেল,কাতলা ইত্যাদি।

নবরত্ন মন্দির

একটি দর্শনীয় প্রত্নত্ত্বাত্বিক স্থান হচ্ছে নবরত্ন মন্দির। সিরাজগঞ্জ জেলার মধ্যযুগের নিদর্শন হচ্ছে এই নবরত্ব মন্দির। এটি সিরাজগঞ্জ জেলার হাটিকুমরুলে অবস্থিত।একটা উল্লেখযোগ্য পুরাকীর্তি হচ্ছে সিরাজগঞ্জ জেলার হাটিকুমরুলের এই নবরত্ন মন্দির। নবরত্ন মন্দিরটি ৯ টি চুড়ায় তৈরী। আপনি হারিয়ে যেতে পারেন পারে এই দর্শনীয় স্থানটি দেখে।

প্রায় অনুমান করা হয় ১৬৬৪ সালে  দিনাজপুরের কান্তজীর মন্দিরেন অনুকরনে হাটিকুমরুল গ্রামের বাসিন্দা মুর্শিদাবাদের নায়েবে দেওয়ান রামনাথ ভাদুরি এই নবরত্ন মন্দির নির্মান করেন।প্রতিদিন এই স্থানটি প্রচুর মানুষ আসে দর্শন করতে।  এই মন্দিরটি অনেক কারুকার্য দ্বারা বেষ্ঠিত। যা প্রকৃতি প্রিয় মানুষকে আকৃষ্ট করে।মন্দিরটির প্রবেশ পথ পূর্ব দিকে। 

মন্দিরটিতে উপরে ওঠার জন্য সিরি রয়েছে। মন্দিরটিতে একটি গম্বুজ রয়েছে এবং চারিকে বারান্দা রয়েছে। এর আকার আকৃতি অনেকটা ছোটো। মন্দিরের পাশে একটা পুকুর রয়েছে। এই পুকুরটি ঘিরে রয়েছে নানান ইতিহাস। কেউ বলে জমিদাররা নাকি গুপ্তধন লুকিয়ে রাখতো আবার কেউ বলেন বিভিন্ন দেব দেবির আস্তানা হিসাবে ব্যবহিত হত।

রবীন্দ্রনাথের কাচারি বাড়ি

রবীন্দ্রনাথের পৈত্রিক জমিদার বাড়ি সিরাজগঞ্জ জেলার শাহজাদপুরে অবস্থিত। যা কাচারি বাড়ি নামে পরিচিত। ১৮৪২ সালে এই কাচারি বাড়িটি ইংরেজরা নিলামে তোলে তখন রবীন্দ্রনাথের দাদা প্রিন্স দারকানাথ ঠাকুর বাড়িটি ক্রয় করেন ১৩ টাকা ১০ আনায়। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এই বাড়িটিতে আগমন করেন ১৮৮৯ সালে।


এই কাচারি বাড়িটিতে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কিছুকাল অতিবাহিত করেন।তিনি প্রায় ৭ বছর এখানে অতিবাহিত করেছেন। আর এখান থেকে তিনি রচনা করেছেন সোনার তরী, দুই পাখি,আকাশের চাঁদ,যমুনা, চিত্রা, চৈতালী ইত্যাদি। রবীন্দ্রনাথের প্রিয় একটি স্থান ছিল শাহজদপুরের এই কাচারি বাড়ি। শাহজাদপুরের প্রাণ-প্রকৃতির প্রতি তিনি আকৃষ্ট ছিলেন। গাছের সবুজ 

ডালপালা,পাখির চেঁচামেচি, কামিনী ফুলের গন্ধ তার কাছে পছন্দের ছিল। ১৯৫৮ সালে রবীন্দ্রনাথের কাচারি বাড়িটি স্মৃতি রূপে প্রত্নতত্ত্বের ব্যবস্থাপনায় সংরক্ষিত করা হয়। বর্তমানে কাচারি বাড়িটি মেরামত করে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিনত করা হয়েছে।

দর্শনীয় স্থান চায়না বাঁধ 

সিরাজগঞ্জ জেলার চায়না বাঁধ একটি অন্যতম দর্শনীয় স্থান।যমুনা নদীর পাড়, সবুজ ঘাসে ঘেরা এই বাঁধটিতে প্রতিদিন প্রচুর মানুষ তাদের একান্ত সময় কাটাটে চলে যায়।চায়না বাঁধ কে ক্রসবার ৩ বলা হয়। যমুনা নদীর কুল ঘেসে এই বাঁধটি করা হয়েছে সিরাজগঞ্জ শহর রক্ষার্থে। চায়না বাঁধটি সিরাজগঞ্জ জেলা থেকে ২ কিলোমিটার দূরে তৈরী করা হয়েছে।অনেক মানুষ যমুনা নদীতে ঘোরাফেরা করে থাকেন বিকেলের সময়টিতে। বাঁধের রাস্তাটি পিচ ঢালাই করা যা অপরুপ সৌন্দর্যে ঘেরা। আপনি চাইলে দেখে আসতে পারেন।

জয়সাগর দিঘি

সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জ উপজেলায় অনেক গুলো দর্শনীয় স্থান রয়েছে তার মধ্যে জয়সাগর দিঘি অন্যতম। জয়সাগর নামটি প্রাচীন এবং ঐতিহাসিক নাম। জয়সাগর দিঘিটি প্রায় ৫৮ একর জায়গা নিয়ে অবস্থিত। জয়সাগর দিঘি নিয়ে বিভিন্ন মানুষের বিভিন্ন রকম মতামত রয়েছে। কেউ বলে রাজা তার প্রজা এবং কয়েক লক্ষ গরুরপানির কষ্ট দূর করার জন্য জয়সাগর 

দিঘিটি খনন করেন। আবার কেউ বলেন  রাজা অচ্যুত সেনের কন্য ভদ্রাবতী কে দেখে ফিরোজ শাহের পুত্র মুগ্ধ হন। পরবর্তিতে বিয়ে প্রস্তাব দেন। কিন্তু সে প্রস্তাবে সম্মতি না থাকায় বাহাদুর শাহ ভদ্রাবতীকে অপহরণ করেন ফলে অচ্যুত সেনের সাথে যুদ্ধ হয় নিমগাছি পান্তরে। এই যুদ্ধে অচ্যুত সেন বদ্রাবতী কে উদ্ধার করেন এবং জয়লাভ করে আর এই জয়ের স্মৃতি স্বরুপ ধরে রাখতেই জয়সাগর দিঘি খনন করেন।

ঐতিহ্যবাহী সলঙ্গার গরুর হাট

সিরাজগঞ্জ জেলার সবচেয়ে প্রাচীনতম গরুর হাট হচ্ছে সলঙ্গার গরুর হাট। সলঙ্গাতে সপ্তাতে ১ দিন গরুর হাট বসে সোমবারে। সলঙ্গার আশের পাশের গ্রাম-গঞ্জসহ সলঙ্গা থানা ব্যতীত অন্য থানার মানুষজনও এই হাটে এসে গরু বিক্রি করে থাকে। কেননা এটা প্রাচীনতম হাট বলে। এই হাট ব্রিটিশ আমলের হাট। সলঙ্গা হাটে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে গুরুর ব্যাপারী এসে গরু কিনে নিয়ে যায়। এবং তারা বিভিন্ন জেলাতে বিক্রি করে। নাম এবং ঐতিহ্যর দিক দিয়ে সিরাজগঞ্জ তথা বাংলাদেশের মধ্যে অনতম নাম করা হাট।

ধুবিল কাটার মহল জমিদার বাড়ি

সিরাজগঞ্জ জেলা রায়গঞ্জ উপজেলার সলঙ্গা থানায় ধুবিল কাটারমহল জমিদার বাড়ি অবস্থিত। ভারত উপমহাদেশের বিভিন্ন নিদর্শনের মধ্যে ধুবিল কাটার মহল জমিদার বাড়ি অন্যতম। জমিদারি প্রথা না থাকলেও এখনো বিলুপ্ত হয়ে যায়নি জমিদারদের ইতিহাস ঐতিহ্য। জমিদার বাড়িগুলো এখনো কালের সাক্ষী হয়ে দাড়িয়ে আছে।এর মধ্যে অন্যতম ধুবিল জমিদার বাড়ি। অনেকে কাছে তালুকদার বাড়ি হিসাবেও পরিচিত। এই বাড়িটি প্রায় ১৮৪০ সালে নির্মাণ করা হয় মুন্সি আব্দুর রহমান তালুকদারের আমলে। এক সময় বাড়িটির সামনে হাতি আর ঘোরা বাধা থাকতো।এখনো বাড়িটি নানান ধরনের কারুকার্য দ্বারা বেষ্ঠিত রয়েছে।

বঙ্গবন্ধু ইকো-পার্ক

সিরাজগঞ্জ জেলার মধ্যে একমাত্র বিনোদন কেন্দ্র হলো বঙ্গবন্ধু ইকোপার্ক।  এই ইকোপার্ক টি প্রায় ১২০ একর যায়গা নিয়ে গঠিত। বন বিভাগ যমুনা সেতুর পশ্চিম পাড়ে এই ইকোপার্কটি প্রতিষ্ঠা করেন। ইকোপার্কটিতে প্রাকৃতিক পরিবেশের জন্য দিন দিন দর্শনার্থীর সংখা বাড়ছে।এই পার্কটিতে বিভিন্ন প্রকার, ফলজ,বনজ,এবং ঔষুধি গাছ রয়েছে। এছাড়াও বঙ্গবন্ধু পার্কটিতে বন্য প্রানী যেমন ময়ুর, খরগোশ,সজারু,হরিণ,বানর ইত্যাদি রয়েছে।

শেষ কথা

বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলাতে বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান রয়েছে তার মধ্যে সিরাজগঞ্জ জেলাও রয়েছে। তাই যারা প্রকৃতি প্রিয় মানুষ এবং দর্শনীয় স্থান দেখতে ভালোবাসেন, তারা চলে আসুন সিরাজগঞ্জ জেলাতে। সিরাজগঞ্জের দর্শনীয় স্থানগুলো আপনাকে মুগ্ধ করবে।




এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

মাহবুব আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন

comment url