রাঙ্গামাটি ভ্রমণ কাহিনী
রাঙ্গামাটি
প্রকৃতি প্রিয় মানুষদের পৃথীবির সবচেয়ে বড় নেশা হচ্ছে, ভ্রমণের নেশা। বাংলাদেশে ২৪-২৫ টা জেলা ভ্রমণ করেছি তবে রাঙ্গামাটির কাপ্তাই ভ্রমণের অভিজ্ঞতাটা ভিন্ন রকম ছিল। আর এই রাঙ্গামাটি ভ্রমণের অভিজ্ঞতাই শেয়ার করবো।
রাঙ্গামাটি বাংলাদেশের অন্যতম একটি নিদর্শন স্থান। রাঙ্গামাটির বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান ভালো লাগবে না এমন মানুষ পাওয়া কঠিন। রাঙ্গামাটির কাপ্তাই এর অপরূপ সৌন্দর্য যে কোনো মানুষ কে মুগ্ধ করবে। সাথে পাহাড়ি গ্রাম,শুভলং ঝর্ণা,লাভ পয়েন্ট যা ছবির চেয়েও সুন্দর।
রাঙ্গামাটি ভ্রমণে আমার অভিজ্ঞতা
আগেই বলেছি প্রকৃতির নেশা বড় নেশা, সাথে যদি মন খারাপ থাকে তাহলে মন ভালো করার একমাত্র ঔষুধ হলো ভ্রমণ। যেটা প্রকৃতি প্রিয় মানুষগুলো ভালো বুঝতে পারে। হঠাৎ বেশ কিছুদিন যাবৎ আমার মন খারাপ ছিল কেমন যেন ডিপ্রেশন আমাকে গ্রাস করতে চাচ্ছে। তাই হঠাৎ করে সিদ্ধান্ত নিলাম
ঘুরতে জাবো কোথায় জাবো জানি না। মন চাইলো হারিয়ে যেতে কোনো এক অজানা পাহাড়ে।প্রথমে সিদ্ধান্ত নিলাম কক্সবাজার সেন্টমার্টিন জাবো, আবার ভাবলাম বান্দরবান বা সাজেক জাবো। কিন্তু কোনটাই হলো না। হঠাৎ করে একটা ট্রাভেল গ্রুপের সাথে পরিচয় হলো এবং তাদের কথা বার্তা ভালো লেগে গেলো।
ওহ বলাই হয়নি, আমি যতবারই ট্যুর দিয়েছি সব সময় বন্ধুবান্ধবের সাথে দিয়েছি। একা কখনো ট্যুর দেইনি। তাই সিদ্ধান্ত নিলাম যেহেতু আমি একা তাহলে ট্রাভেল গ্রুপের সাথে গেলে মন্দ হয়না। শেষ মেষ "ভ্রমণ প্রিয় পর্যটক"গ্রুপের সাথে যাওয়ার প্রস্ততি নিলাম। ট্যুরের আগের দিন বিকালের দিকে সিরাজগঞ্জ থেকে বের হলাম ঢাকার উদ্দেশ্য।
রাত ৮ টার দিকে ঢাকা আগারগাঁও পৌছাইলাম। আগারগাঁও আমার ছোটো বেলার বন্ধু থাকে শাহআলাম। ওর কাছেই রাতে থাকলাম। পরের দিন রাতে ভ্রমনের উদ্দেশ্য গাড়ি ছেরে দিবে ট্রাভেল গ্রুপ থেকে বলা হলো। ঠিক ৬.০০ টার সময় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সবাই কে উপস্থিত থাকতে বললো এবং সবাই সঠিক সময়ে উপস্থিত হলাম।
ট্যুর গাইডের সাথে পরিচিত হলাম। অনেক অপেক্ষার পর অবশেষে গাড়ি আসলো।রাত ১০.০০ টায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে রাঙ্গামাটির উদ্দেশ্যে বের হলাম। ঢাকার ভিতরে জ্যামে পরে গেলাম। যাত্রাবাড়ি যাইতেই রাত ১.০০ টা বেজে গেলো।জ্যাম ছাড়লো তারপর আবার যাত্রা শুরু হলো মাঝ পথে একটু অসুস্থ্য হয়ে গেলাম।
প্রতিবার বন্ধুবান্ধবের সাথে ট্যুর করেছি তাই অন্য রকম একটা সাহস ছিল। কিন্তু এবার সম্পর্ণ ভিন্ন একা তাও অপরিচিত মানুষদের সাথে। ভয় করেছিল কিন্তু অজানাকে জানা এবং অচেনা কে চেনা এর ভিতরে অন্য রকম আনন্দ পাওয়া যায়। সবার সাথে পরিচিত হলাম ভালো লাগা শুরু হলো।বাস যখন সীতাকুণ্ড পৌছালো
তখন ভোর হয়ে যায় ফজরের আযান দেয়। নামাজের বিরতি দেয় নামাজ পরে আবার গাড়ি স্টাট করে দেয়। আবার গাড়ি চলতে থাকে। সকাল ১০.০০ টায় রাঙ্গা মাটি পৌছায়।ভ্রমণ পর্যটক গ্রুপের গাইড কাহার ভাই আগে থেকেই বোর্ট এবং সকালে খাওয়ার জন্য হোটেল বুকিং করেন। আর এই কাজ গুলো
আগে থেকেই বুকিং করার জন্য আমরা সহজেই ভ্রমণ স্থানগুলো দেখতে পারি। সকালে বাস থেকে নেমেই আমরা ফ্রেশ হলাম। ফ্রেশ হয়ে বোর্ট এ উঠলাম বোর্ট প্রথমেই আমাদের খাবার হোটেলে নিয়ে গেলো। আমরা হোটেলে যা যা খেলাম
- বাম্বু চিকেন
- মুগের ডাউল
- রুই মাছ
- ভর্তা
- মুরগীর মাংস
- কাপ্তাই এর মাছ ইত্যাদি
খাওয়া দাওয়া শেষ করে আমরা একটু রেস্ট নিলাম। যদিও খাবারের একটু দাম বেশি তবে খাবারের মানগুলো ভালো।বিশ্রামের পরে সবাই আবার একত্রিত হলাম। সবাই সিদ্ধান্ত নিলাম আগে রাঙ্গামিটির দর্শনীয় স্থানগুলোর কোথায় কোথায় ঘোরা যায়। সবাই দর্শনীয় স্থান ভ্রমণের জন্য বের হলাম।
রাঙ্গামাটির যে যে স্থানগুলো দেখলাম
পোস্ট সূচীপত্রঃ
আসলে রাঙ্গামাটির সৌন্দর্যের বর্ণনা দিতে গেলে পেজের পর পেজ চলে জাবে কিন্তু বলে মেষ করা জাবে না। রাঙ্গামাটির সৌন্দর্য ছবির চেয়েও সুন্দর।লেকের জলরাশি আপনাকে মুগ্ধ করবেই। মাঝে মাঝে পাহাড়ি বাড়ি দেখা যায় যা অনেক সুন্দরতম দৃশ্য। এমন দৃশ্য থেকে চোখ যেন ফিরতেই চায় না।
যেই দিকেই তাকাই না কেন শুধু সৌন্দর্য আর সৌন্দর্য।চারিদিকে পাহাড়ি গাছপালা মনকে শীতল করে দেয়। আদি-বাসিরা কতটা কর্মঠ আসলে রাঙ্গামাটি না আসলে বোঝা যায় না। পাহাড়ি মানুষদের আনাগোনা মনের ভিতরে প্রশান্তি দেয়। সুবিশাল পাহাড়ের গাছ পালার সৌন্দর্য কেমন সেটা রাঙ্গামাটি না গেলে বোঝা জাবে না।
কাপ্তাই লেক
পৃথীবির নয়াভিরাম একটি দৃশ্য হলো কাপ্তাই লেকের। কাপ্তাই লেক ভালো লাগবে না এমন মানুষ পৃথিবীতে পাওয়া জাবে না।প্রকৃতি প্রিয় মানুষদের প্রশান্তির যায়গা হলো কাপ্তাই লেক। নৌকাতে করে মাঝি ভাইয়ের সাথে আলাপ করতে করতে কাপ্তাই লেক দেখা কতটা আনন্দের ভ্রমণ পিপাসুরা সেটা পেয়ে থাকে।
কাপ্তাই এর আকাবাকা লেক আর পাহাড় দেখতে ছবির মত মনে হলেও বাস্তবে তারচেয়ে বেশি সুন্দর। নৌকাতে কাপ্তাই এর আঁকাবাঁকা পথ ঘুরতে ঘুরতে চোখে পড়ে পাহাড়ি গ্রাম গুলো যেখানে চোখে পরে কর্মঠ মানুষগুলো। আসলে তাদের স্বচোখে না দেখলে বিশ্বাস করা যায় না তারা কতটা পরিশ্রমি। লেক
থেকে পাহাড়ের সুবিশাল গাছগুলোর আড়ালে সূর্য যখন ডুবে যায় তখন পাহাড়গুলো দ্বৈত্ব দানবের মত মনে হয়। আর তখনই যেন সারাদিনের ক্লান্তি দূর হয়ে যায়।
ঝুলন্ত সেতু
বাংলাদেশের এমন কোনো মানুষ নেই যে ঝুলন্ত সেতুর পিকচার দেখেনি। এই সেতুর আকর্ষর্ণেই মানুষ রাঙ্গামাটি যায়। অবশেষে বাস্তবে দেখলাম ঝুলন্ত সেতু। নিজ চোখে দেখা ঝুলন্ত সেতু ছবির চেয়েও বেশি সৌন্দর্য দেখায়। সেতুর চার পাশের দৃশ্য মনকে প্রশান্তি দেয়। এখানে অনেক সময় কাটালাম।প্রচুর
মানুষ এই স্থানে ছিল। সবাই ছবি তোলাতে নিজেকে যেন ব্যস্ত করে রাখছে। কেনই বা রাখবে না। যে দৃশ্যগুলো এতদিন ছবিতে দেখেছে সেটা বাস্তবে দেখছে।ঝুলন্ত সেতুর সৌন্দর্যর কথা বলে শেষ করা যাবে না।
পলওয়েল পার্ক
রাঙ্গামাটিতে একমাত্র সৌন্দর্য ঘেরা একটি পার্ক। এই পার্কে অনেক দর্শনীয় স্থান রয়েছে। বিশেষ করে লাভ পয়েন্ট। লাভ পয়েন্ট দেখতে ভীষণ সুন্দর। অনেক মানুষ লাভ পয়েন্টে গিয়ে ছবি তোলে। এমন কোন প্রকৃতি প্রেমি নাই রাঙ্গামাটির লাভ পয়েন্টের ছবি তোলে নাই। লাব পয়েন্ট রাঙ্গামাটির সুন্দরতম একটা ভিউ।
পাহাড়ি গ্রাম
কাপ্তাই লেক থেকে পাহাড়ি গ্রাম গুলো অনেক সুন্দর দেখা যায়। মন চাইলো পাহাড়ি গ্রাম দেখতে তাই চলে গেলাম। পাহাড়ি মানুষগুলো অনেকটা মিশুক প্রকৃতির এবং কর্মঠ প্রকৃতির। সবাই যার যার কাজ নিযে ব্যস্ত। পাহাড়ি গ্রামগুলো সাধারণত পাহাড়ের উচু স্থানে হয়ে থাকে। গাছ-গাছালির ভিতরে গ্রামগুলো
দেখতে অনেক সুন্দর লাগে এবং উপভোগ করার মত। পাহাড়ি গ্রামগুলোও দেখতে অনেক সুন্দর লাগে।আসলে নিজ চোখে না দেখলে বুঝতাম না।
শুভলং ঝর্ণা
রাঙ্গামাটির শুভলং ঝর্ণা মনে প্রশান্তি দেয়। নৌকার মাঝি যখন দূর থেকে দেখালো ঐ যে মামা শুভরং ঝর্ণা। মনে চাইলো কাছে যাইতে, কাছেও গেলাম মন ভরে দেখলাম। শুভলং ঝর্ণা দেখতে চাইলে রাঙ্গামাটি যেতে হবে।
স্বর্ণমূর্তি
একমাত্র রাঙ্গামাটিতেই স্বর্ণমূর্তি দেখা যায়। আর সেটা নিজ চোখে দেখলাম। আসলে বাসা থেকে বের না হলে জগতের সবই যেন অদেখা হয়ে যায়। অনেক ভালো সময় কাটালাম।
রাজবন বিহার
রাঙ্গামাটির রাজবন বিহার সুন্দরতম একটা স্থান। আসলে দেখার রাজ্যে দেখতে হলে প্রকৃতির কাছে যেতে হবে। অবশেষে রাজবন বিহার দেখে মেষ করলাম।অবশেষে রাঙ্গামাটির প্রায় সবগুলো দর্শনীয় স্থান দেখে শেষ হতে সময় লাগলো সন্ধা পর্যন্ত।
আবার ভ্রমণ পর্যটক গ্রুপের সবাই একত্রিত হলাম। ঢাকার উদ্দেশ্য বের হবার জন্য। অবশেষে আমাদের বাস রাত ১০.০০ টায় ছেরে দিল। মেষ পর্যন্ত ভোরে ঢাকায় এসে ভালোভাবে পৌছাইলাম।
শেষ কথা
আসলে মনের প্রশান্তি যদি কেউ পেতে চান তাহলে বাসা থেকে বের হতে হবে। ঘুরতে হবে, দেখতে হবে, অজানাকে জানতে হবে, দেখতে হবে। আমার দেখা রাঙ্গামাটি ট্যুর এভাবেই শেষ হয়েছে।
মাহবুব আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন
comment url