মাশরুমের ১৫ টি ঔষুধিগুণ ও মাশরুম খাওয়ার নিয়ম জানুন
মাশরুমের ১৫ টি ঔষুধিগুণ ও মাশরুম খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন? আমরা প্রায় সবাই মাশরুম চিনে থাকি, কিন্তু মাশরুমের পুষ্টিগুণ এবং ঔষধিগুণ সম্পর্কে অনেকেই সঠিক জানিনা। এই আর্টিকেলটির মাধ্যমে নিচে মাশরুমের যাবতীয় তথ্য জানতে পড়ুন।
মাশরুম একটি ক্লোরোফিল বিহীন ছত্রাক জাতীয় উদ্ভিদ এবং এটি একটি নতুন ধরনের সবজি যাকে সম্পূর্ণ হালাল হিসেবে গণ্য করা হয়। মাশরুম অনেক সুস্বাদু পুষ্টিকর ও উচ্চ খাদ্য শক্তি এবং ভেজষগুণে ভরপুর হয়ে থাকে। নিচে মাশরুমের ১৫ টি ঔষুধিগুণ ও মাশরুম খাওয়ার নিয়ম জানতে পড়ুন।
পোস্ট সূচিপত্রঃ মাশরুমের ১৫ টি ঔষুধিগুণ ও মাশরুম খাওয়ার নিয়ম জানতে পড়ুন
- মাশরুমের ১৫ ঔষধি গুণাগুণ
- মাশরুম খাওয়ার নিয়ম
- মাশরুম পাউডার খাওয়ার নিয়ম
- মাশরুম পাউডার কোথায় পাওয়া যায়
- মাশরুম কত টাকা কেজি
- মাশরুমের অপকারিতা
- মাশরুমের ৪টি মজাদার খাবারের রেসিপি
- মাশরুম চাষ পদ্ধতি
- মাশরুম চাষের সুবিধা
- মাশরুম চাষের অসুবিধা
মাশরুমের ১৫ ঔষধি গুণাগুণ
মাশরুম একটি সুস্বাদু হালাল খাবার। মাশরুমে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে পুষ্টিগুণ এবং ঔষধি গুণাগুণ। প্রায় অধিকাংশ মানুষ মাশরুমের এই গুণাগুণ সম্পর্কে জানে না । তাই নিম্নে মাশরুমের ১৫ টি ঔষুধিগুণ ও মাশরুম খাওয়ার নিয়ম আলোকপাত করা হলো।
গর্ভবতী মা ও শিশুদের রোগ প্রতিরোধে মাশরুমঃ মাশরুমে প্রচুর পরিমাণে আমিষ,শর্করা,চর্বি, ভিপামিন এবং মিনারেলের সমন্বয় রয়েছে যা শরীর স্বাস্থ্যের জন্য ইমিউন সিস্টেমকে উন্নত করে রাখে। মাশরুমে রয়েছে নিয়োসিন ও অ্যসকরবিক এসিড বা ভিটামিনের প্রাচুর্য। আর মাশরুমে এগুলো থাকায় স্কার্ভি ( Scurvy), পেলেগ্রা( Pellegra),প্রভৃতি শিশু ও গর্ভবতী মহিলাদের রোগ প্রতিরোধের জন্য বিশেষ কার্যকরী ভূমিকা পালন করে থাকে বা বিশেষ উপকারী।
আরো পড়ুনঃ নিম পাতার উপকারিতা, অপকারিতা- খাওয়ার নিয়ম ও ব্যবহারবিধি জেনে নিন
মাশরুম চর্মরোগ প্রতিরোধ করেঃ মানুষের নানা ধরনের চর্ম রোগ হয়ে থাকে। আর এই চর্মরোগ নিরাময়ে মাশরুম বিশেষভাবে উপকারী ভূমিকা পালন করে। এমনকি ঝিনুক মাশরুমের নির্যাস থেকে খুশকি প্রতিরোধী ওষুধ তৈরি করা হয় যা শরীর স্বাস্থ্য জন্য বিশেষ উপকারী।
দাঁত ও হাড় গঠনে মাশরুমঃ মাশরুম একটি পুষ্টিকর খাবার।মাশরুমে রয়েছে প্রচুর পরিমানে কালসিয়াম ফসফরাস এবং ভিটামিন ডি এর উপাদান। যা দাঁত ও হাড় গঠনে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে থাকে। বিশেষ করে শিশুদের দাঁত ও হাড় গঠনে এই উপাদানগুলো অত্যন্ত কার্যকরী। তাই নিয়মমাফিক ভাবে প্রতিটি মানুষের জন্য মাসরুম অতি প্রয়োজনীয় এবং গুরুত্বপূর্ণ।
উচ্চ রক্তচাপ ও হৃদরোগ প্রতিরোধে মাশরুমঃ উচ্চ রক্তচাপ এবং হৃদরোগ প্রতিরোধে মাশরুম কার্যকারী ভূমিকা পালন করে। মাশরুমে কোলেস্টেরল কমানোর উপাদানগুলো যেমন ইরিটাডেনি,লোভাষ্টটি,এনটাডেনি,কিটিন, এবং ভিটামিন বি ভিটামিন সি ও ভিটামিন ডি থাকায় আপনি যদি মাশরুম খান, তাহলে উচ্চ রক্তচাপ (হাই ব্লাড পেসার) ও হৃদরোগ নিরাময় হবে।প্রিয় পাঠক তাই নিয়মিতভাবে চেষ্টা করবেন মাশরুম খাবার। উচ্চ রক্তচাপ ও হৃদরোগ প্রতিরোধে মাশরুমের কোন বিকল্প নাই।
বহুমূত্র প্রতিরোধে মাশরুমঃ বহুমূত্র রোগ প্রতিরোধে মাশরুমের উপকারিতার কথা বলে শেষ করা যাবে না। যারা ডায়াবেটিস আক্রান্ত রোগী তাদের জন্য শর্করা ও ফ্যাট জাতীয় খাবার ক্ষতিকারক। মাশরুমে শর্করা ও ফ্যাট কম থাকায় এবং অ্যাঁশ বেশি থাকায় বহুমূত্র বা ডায়াবেটিস রোগের জন্য মাশরুম বিশেষ কার্যকরী ও ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য আদর্শ খাবার বলা হয়ে থাকে। ডায়াবেটিস আক্রান্ত রোগীরা যদি নিয়মিতভাবে মাশরুম খায়, তাহলে ব্লাড সুগার কমে আনা সম্ভব। তবে এক্ষেত্রে সব সময় ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী খাওয়াই উচিত।
এইডস প্রতিরোধক হিসেবে মাশরুমঃ মাশরুম এইডস প্রতিরোধক হিসাবে কাজ করে। মাশরুমে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ট্রাইটারপিন (Triterpin)। মাশরুমে ট্রাইটারপিন(Tirterpin) থাকাতে বর্তমানে এটি বিশ্বে এইডস (AIDS) প্রতিরোধক হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।
আমাশয় রোগ নিরাময়ে মাশরুমঃ আমাশয় নিরাময়ের জন্য মাশরুম কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। মাশরুমে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ইনসুলিন। আরে ইলুডিন এম ও এস (Eludin M&S) থাকাতে আমাশয়ের জন্য মাশরুম বিশেষ উপকারী। তাই যারা আমাশয়ের রোগী তারা যদি নিয়মিতভাবে মাশরুম খান তাহলে আমাশয় রোগ থেকে মুক্তি পাবেন।
ক্যান্সার ও টিউমার প্রতিরোধে মাশরুমঃ ক্যান্সার ও টিউমার প্রতিরোধে মাশরুম খুবই গুরুত্বপূর্ণ। মাশরুমে প্রচুর পরিমাণে বেটা-ডি,ল্যামপট্রোল টারপিনয়েড,ও বেনজো পাইরিন ইত্যাদি রয়েছে। যা ক্যান্সার ও টিউমার প্রতিরোধে খুবই কার্যকারী।ফ্রান্সের মানুষ পর্যাপ্ত পরিমানে মাশরুম খান বলে গত এক শতাব্দি ধরে ক্যান্সার রোগের পাদুর্ভাব অনেক কমে গেছে বলে দাবি করা হয়। এছাড়া সম্প্রীতি জাপানের জাতীয় ক্যান্সার ইনস্টিটিউটের
একটি গবেষণায় জানা গেছে যে মাশরুমের ভিতরে ক্যান্সার প্রতিহত করার ক্ষমতা রয়েছে। তাই আপনারা যদি নিয়মিতভাবে মাশরুম খান ক্যান্সার ও টিউমার রোগ থেকে দূরে থাকার সম্ভব বলে মনে হয়। আর যাদের ক্যান্সার বা টিউমার রয়েছে তারা ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী নিয়মিতভাবে মাশরুম খান তাহলে সুস্থ হয়ে যাবেন আশা করি। ক্যান্সার এবং টিউমারের জন্য মাশরুমের কোন বিকল্প নেই।
হাইপার টেনসনে মাশরুমঃ নিয়মিত মাশরুম খেলে হাইপার টেনশন দূর হয়ে যায়। মাশরুমে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন-১২ এবং স্ফিংগলিপিড। আর এই মাশরুমে ভিটামিন-১২ ও স্ফিংগলিপিড (Sphingolipid)বেশি থাকায় স্নায়ুতন্ত্র ও স্পাইনা কর্ড (Spinal Cord) সুস্থ রেখে থাকে। আরে মাসুম খাওয়ার ফলে মেরুদণ্ড দৃঢ় থাকে এবং হাইপার টেনশন দূর হয়। তাই প্রতিনিয়ত হাইপার টেনশন দূর করার জন্য মাশরুম খেতে পারেন।
চুল পড়া ও পাকা প্রতিরোধে মাশরুমঃ আপনি যদি চুল পড়া ও পাকা প্রতিরোধ করতে চান তাহলে আপনাকে নিয়মিত খেতে হবে মাশরুম। কেননা মাশরুমে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে সালফার(Salfur) সরবরাহকারী এমাইনো এসিড। আর এগুলো থাকায় আপনি যদি নিয়মিত মাশরুম খান, তাহলে চুল পড়া এবং চুল পাকা থেকে প্রতিরোধ পাবেন। তাই প্রতিদিন নিয়মিতভাবে মাশরুম খান।
পেটের পীড়ায় বা প্রোটিন যোগানে মাশরুমঃ পেটের পীড়ায় বা প্রোটিন যোগানে মাশরুমের গুরুত্ব অপরিসীম। কেননা মাশরুমে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন। আর এই প্রোটিন সুস্বাদ, মুখরোচক ও সহজপ্রাচ্য। এছাড়াও মাশরুমে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণে এনজাইম(Anzyme)। বিশেষ করে ট্রিপসিন(Trypsin) এবং অগ্নাশয় থেকে নির্গত জারকরস (Jarkros) আছে বলে মাসুম খাদ্য পরিপাক এবং হজমে বিশেষভাবে সাহায্য করে থাকে। রুচি বর্ধক এবং পেটের পীড়া নিরাময়ে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে বা নিরাময়ক হিসেবে কাজ করে।
কিডনির রোগ প্রতিরোধে মাশরুমঃ মাশরুম কিডনি রোগ ও এলার্জি রোগের প্রতিরোধক হিসেবে কাজ করে। মাশরুমে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে নিউক্লিক এসিড (Nucleic Acid) ও এন্টি এলার্জেন(Anti-Allergen) এবং সোডিয়াম এর পরিমাণ কম থাকায় কিডনি রোগের প্রতিরোধক হিসেবে কাজ করে। তাই কিডনি রোগ থেকে রক্ষা পেতে মাশরুম খাওয়ার কোন বিকল্প নেই। প্রতিদিনের খাবার তালিকা অনুসারে মাশরুম খাওয়া উচিত যারা কিডনি রোগে আক্রান্ত। নিয়মিত যদি মাশরুম খাওয়া যায়, তাহলে কিডনি রোগ থেকে আশা করি সেফা পাবেন।
হেপাটাইটিস-বি ও জন্ডিস প্রতিরোধে মাশরুমঃ জন্ডিস প্রতিরোধে মাশরুম খুবই গুরুত্বপূর্ণ। মাশরুমে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফলিক এসিড (Folic Acid),লৌহ, লিংকজাই-৮(Linkzai-8) এবং এমাইনো এসিড। আর মাশরুমে এগুলো থাকায় হেপাটাইটিস বি ও জন্ডিসের প্রতিরোধক হিসেবে কাজ করে। তাই যারা জন্ডিস রোগে আক্রান্ত তারা খেতে পারেন মাশরুম। আপনি যদি নিয়মিত মাশরুম খান তাহলে হেপাটাইটিস বি ও জন্ডিস রোগ থেকে প্রতিরোধ পাবেন।
দৃষ্টিশক্তি রক্ষায় মাশরুমঃ দৃষ্টিশক্তি রক্ষার জন্য মাশরুমের ভূমিকা অনস্বীকার্য। মাশরুমে প্রচুর পরিমাণে খনিজ লবণ রয়েছে। আর এই খনিজ লবণ চোখের দৃষ্টিশক্তি রক্ষা করার জন্য বিশেষ ভূমিকা পালন করে। তাই নিয়মিত ভাবে যদি আপনি মাশরুম খান তাহলে চোখের দৃষ্টি শক্তি ভালো থাকবে। তাই দৃষ্টি শক্তিকে রক্ষা করার জন্য মাশরুমের বিকল্প নেই।
রক্তস্বল্পতা প্রতিরোধে মাশরুমঃ আপনার যদি রক্তস্বল্পতা দেখা দেয় বা যায় তাহলে, খেতে পারেন মাশরুম। নিয়মিত যদি মাশরুম খান তাহলে রক্তস্বল্পতা আর দেখা দিবে না বরং বৃদ্ধি পাবে। শরীরের রক্ত সল্পতা থেকে রক্ষা পেতে মাশরুমের কোন বিকল্প নেই। আপনি যদি নিয়মিত ভাবে মাশরুম খান তাহলে রক্তস্বল্পতার হাত থেকে রেহাই পাবেন।
নিম্নে মাশরুমের খাদ্যগুণ (প্রতি ১০০ গ্রামে) দেখানো হলোঃ
- ক্যালোরি-৪২,ক্যালসিয়াম-১০মিঃগ্রাম- ভিটামিন বি১-০.১ মিঃগ্রাম
- প্রোটিন-৩.৫ গ্রাম,লৌহ-১.৫ মিঃগ্রাম- ভিটামিন বি২-০.৬১ মিঃগ্রাম
- ফ্যাট-০.৭ গ্রাম,ফসফরাস-১০০ মিঃগ্রাম-ভিটামিন বি১২-১০০ মিঃগ্রাম
- শর্করা- ৫.১ মিঃগ্রাম-ভিটামিন সি-১৮ মিঃগ্রাম
- জলীয় পদার্থ-৮৭-৯১%-নিয়োসিন২.৪ মিঃগ্রাম
প্রিয় পাঠক আপনার দৈনন্দিন খাবার তালিকাতে প্রতিনয়ত রাখবেন মাশরুম। আপনার খাদ্য তালিকাতে প্রতিনিয়ত যদি মাশরুমের উপস্থিতি থাকে তাহলে খাদ্য তালিকা করবে পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ আকর্ষণীয়
আরো পড়ুনঃ মিষ্টি কুমড়া বীজের ২০ টি উপকারিতা ও অপকারিতা- পুষ্টিগুণ জেনে নিন
মাশরুম খাওয়ার নিয়ম
মাশরুম পাউডার খাওয়ার নিয়ম
মাশরুম সাধারণত উৎপাদনের পর রোদে শুকিয়ে প্রক্রিয়াজাতকরণের মাধ্যমে মাশরুম পাউডার বানানো হয়।আপনি যদি সঠিক নিয়মে মাশরুমের পাউডার খান তাহলে অনেক বেশি পরিমাণ উপকার পাওয়া যায়। আমাদের বাসা বাড়িতে সাধারণত ৫০০ মিলি পানিতে বাড়িতে ব্যবহৃত চামচের আকারে এক চামচ মাশরুম পাউডার ২ থেকে তিন মিনিট পর্যন্ত ভালোভাবে গুলিয়ে নিতে হবে । তারপর মাশরুম পান করতে হবে। এছাড়া অন্য উপায়ও আপনি মাশরুম খেতে পারেন। আপনি যেকোনো তরকারিতে বাঁচা কফির সাথে মাশরুমের গুড়া খেতে পারেন।
মাশরুম পাউডার কোথায় পাওয়া যায়
আপনি আপনার নিকটস্থ বাজারে বিভিন্ন জাতের মাশরুমের পাউডার পাবেন। আপনি যদি আপনার নিকটস্থ বাজারে মাশরুমের পাউডার না পান, তবে আপনি যদি অলাইন প্লাটফর্মে খোঁজাখুঁজি করেন, তাহলে খুব সহজেই মাশরুমের পাউডার পেয়ে যাবেন। অনলাইন প্লাটফর্মে সবচেয়ে উপকারী গ্যানোডোর্মা মাশরুমের পাউডার খুব সহজেই পাওয়া যায়। আপনি যদি অর্ডার করেন তাহলে পৌঁছে দিবে আপনার ঘরের দরজায়।
মাশরুম কত টাকা কেজি
মাশরুম বর্তমান বাজারে পুষ্টিগুণে ভরপুর একটি সবজি। সর্বনিম্ন দামের ওয়েস্টার মাশরুম বাজারে ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা কেজি ধরে পাওয়া যায়। তবে আপনি যদি সর্বোচ্চ দামের ঋষি মাশরুম বা গ্যানোডোর্মা মাশরুম পাউডার কিনতে চান তাহলে আপনার দাম পড়বে ৬ থেকে ৭ হাজার টাকা। আপনি কোন মাশরুম কিনবেন সেটা আপনার উপর ব্যাচেচ করবে। আপনি যদি ভালো মাশরুম চান তাহলে দামটা একটু বেশিই পড়বে।
আরো পড়ুনঃ গর্ভাবস্থায় কামরাঙ্গা খাওয়ার উপকারিতা, অপকারিতা ও পুষ্টিগুণ সম্পর্কে জেনে নিন
মাশরুমের অপকারিতা
প্রিয় পাঠক এতক্ষণ উপরে মাশরুমের ১৫ টি ঔষুধিগুণ ও মাশরুম খাওয়ার নিয়ম জানলেন। শুধু মাশরুমের উপকারিতাগুলোই জানলে চলবে না মাশরুমের কিছু অপকারিতাও রয়েছে। চলুন জেনে নেওয়া যাক মাশরুমের অপকারিতাগুলো।
বর্তমান বিশ্বের অনেক ধরনেরই মাশরুম পাওয়া যায় বা যতগুলো মাশরুম রয়েছে তার বেশিরভাগই খাওয়া যায় না।প্রাকৃতিকভাবে যে মাশরুমগুলো ভূমিতে জন্ম নেয় বা জন্মায় সেগুলোকে আমরা সাধারণত ছত্রাক বা ব্যাংকের ছাতা বলে থাকি। এই মাশরুমগুলো সাধারণত বিষাক্ত ও ক্ষতিকর হয়ে থাকে। আপনি যদি এসব মাশরুম খান তাহলে সহজেই মৃত্যু হতে পারে কোন প্রাণীর।
আপনি যদি কখনো এসব মাশরুম হাত দিয়ে স্পর্শ করেন তাহলে ভালোভাবে সাবান দিয়ে ধুতে হবে। এছাড়া এসব মাশরুম বিভিন্ন কাঠ, ঘর, বাঁধ ইত্যাদির অনেক ক্ষতি করে থাকে। আর এসব মাশরুম বেশিরভাগ জন্মায় পঁচা কাঠে। বিষাক্ত মাশরুম গুলো চেনার উপায় হল এরা কিছুটা রঙ্গিন বর্ণের হয়ে থাকে। এবং এই মাশরুমগুলো প্রচন্ড রোদে জন্মাতে পারেনা।
তাই এসব মাশরুম থেকে আমাদের বেঁচে থাকতে হবে। যেসব স্থানে এসব মাশরুমগুলো জন্ম নেয়, সেসব স্থান সবসময় পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে এবং এ বিষাক্ত মাশরুমগুলো ধ্বংস করে ফেলতে হবে।
মাশরুমের ৪ টি মজাদার খাবারের রেসিপি
মাশরুম দিয়ে চপ- বানানোর নিয়ম
উপকরণগুলোঃ
- মাশরুম -২০০ গ্রাম
- আলু -১০০ গ্রাম
- বাঁধাকপি- ১০০গ্রাম
- ছোলার বেসন- ২৫০ গ্রাম
- গাজর- ৫০ গ্রাম
- পিঁয়াজ-৫০ গ্রাম
- কাঁচা মরিচ- ৫-৭ টা
- লবণ পরিমাণ মত
- সয়াবিন তেল-৫০ গ্রাম
প্রস্তুত প্রণালীঃ প্রথমে আলু সিদ্ধ করে মিশিয়ে নিতে হবে। এরপর মাশরুম, বাঁধাকপি, গাজর কেটে লবণ পেঁয়াজ, কাঁচামরিচ দিয়ে একসাথে মিশিয়ে নিতে হবে। আলুর সাথে মিশিয়ে এক ধরনের বল তৈরি করুন এরপর অন্য পাত্রে বেসন গুলো নিন চুলায় করাই দিয়ে তেল গরম করে নিতে হবে এরপর বল গুলো গরম তেলে ভেঁজে নিতে হবে, তারপর পরিবেশন করুন।
মাশরুমের কোপ্তা- বানানোর নিয়ম
উপকরণঃ
- মাশরুম- ২৫০ গ্রাম
- বেসন ৩ টেবিল চামচ
- মরিচের গুঁড়ো এক চা চামচ
- লবণ এক চা চামচ
- সয়াবিন তেল আধা কাপ
- হলুদ গুঁড়া আধা চা চামচ
প্রস্তুত প্রণালীঃ মাশরুম ধুয়ে প্রথমে বেটে নিতে হবে। এরপর সব উপকরণগুলো একসাথে মিশিয়ে নিতে হবে। প্রয়োজনে এর ভিতর সামান্য পানি দিতে হবে। তারপর ছোট ছোট বল বানিয়ে ডুবো তেলে ভেজে নিতে হবে। তারপর গরম গরম পরিবেশন করতে পারবেন।
মাশরুমের আচার- বানানোর নিয়ম
উপকরণঃ
- মাশরুম-২৫০ গ্রাম
- রসুন-১০গ্রাম
- সরিষার গুলো-২০ গ্রাম
- আদা-২০ গ্রাম
- শুকনো মরিচ-৫ গ্রাম
- মরিচের গুঁড়া-২ গ্রাম
- ভিনেগার- আধা কাপ
- কাঁচা মরিচ-পাঁচ সাতটা
- পিঁয়াজ-১০০ গ্রাম
- লবণ-পরিমাণ মত
- সরিষার তেলে -১০০ গ্রাম
- চিনি-১০০ গ্রাম
প্রস্তুত প্রণালীঃ মাশরুম প্রথমে ৫ থেকে ১০ মিনিট কুসুম গরম পানিতে মাসুমের টুকরো গুলো ব্লানচিং করে নিন। এরপর করাই গরম করে আদা, রসুন, পিঁয়াজ বাটা মিশিয়ে নাড়তে হবে। এবং এর সাথে মাশরুমগুলো ভালোভাবে মিশিয়ে নিন। মিশানো শেষে ভিনেগার, চিনি, শুকনো মসলা,মরিচ, লবণ, সরিষার গুঁড়া দিয়ে ভালোভাবে ফুটিয়ে নিতে হবে। তারপর তুলা থেকে নামিয়ে ঠান্ডা করে জীবন মুক্ত করে সংরক্ষণ করে নিন।
মাশরুমের চিকেন সুপ- বানানোর নিয়ম
উপকরণঃ
- মাশরুম ২৫০ গ্রাম
- কর্নফ্লাওয়ার-দুই টেবিল চামচ
- মুরগীর স্টক- ৪ কাপ
- টেস্টি সল্ট- ৫০ গ্রাম
- কুসুম ছাড়া ডিম- ২ টা
- বাটার- ৫০ গ্রাম
- দুধ- ১ কাপ
- আদা- ৫০ গ্রাম
- লবণ- পরিমাণ মতো
প্রস্তুত প্রণালীঃ আপনি যখন মুরগীর স্টক তৈরি করবেন, তখন ৫০০ গ্রাম ওজনের একটি মুরগীর গিলা, কলিজা, মাথা ও পা বাদে দুই থেকে ২-২.৫০ লিটার পানি দিয়ে আদা ও লবণ দিয়ে সিদ্ধ করে নিতে হবে। যখন সেদ্ধ করা হয়ে গেলে তখন হাড়গুলো ছাড়িয়ে মুরগির মাংসগুলো পানির সাথে মিশিয়ে নিতে হবে। এরপর মাশরুমগুলো হাতে ছাড়িয়ে ব্লানচিং করে নিতে হবে।
এরপর মাশরুমগুলো গরম করুন এবং ভেজে নিন। এরপর মুরগীর স্টকে পরিমাণ মতো গরম পানি মিশিয়ে নিবেনবা নিয়ে ফুটিয়ে নিতে হবে। এরপর ভাজা মাশরুমগুলো মিল মিস করে নিন। এরপর ঠান্ডা পানিতে গুলিয়ে দিন। ডিমের কুসুমগুলো আলাদা করে নিন ও সুপের মধ্য দিয়ে ভালো করে ঘুটে দিন। এরপর টেস্টিং সল্ট ও দুধ মিশিয়ে দিন। প্রয়োজনে সাধারণ লবন দেওয়া যাবে। এরপর নামিয়ে সস মিশিয়ে গরম গরম পরিবেশন করতে হবে।
মাশরুম চাষ পদ্ধতি
মাশরুম সাধারণত দুই পদ্ধতিতে চাষাবাদ হয়ে থাকে কৃত্রিম পদ্ধতি এবং প্রাকৃতিক পদ্ধতি। নিম্নে মাশরুমের চাষাবাদ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোকপাত করা হলো।
কৃত্রিম পদ্ধতিঃ কৃত্রিম পদ্ধতিতে মাশরুম চাষের জন্য সাধারণত কৃত্রিম উপকরণগুলো ব্যবহার করা হয়। এই পদ্ধতিতে মাশরুম চাষের জন্য যে উপকরণগুলো ব্যবহার হয় সেগুলো হলো চাষের খড়, কাঠের গুঁড়া, চালের কুড়া, ভুট্টার গুঁড়া, সরিষার খোল ইত্যাদি উপকরণ।
প্রাকৃতিক পদ্ধতিঃ মাশরুম চাষের জন্য এই পদ্ধতিতে প্রাকৃতিক উপকরণ ব্যবহার করা হয়। এই পদ্ধতিতে মাশরুম চাষের জন্য যে, উপকরণগুলো ব্যবহৃত হয় সেগুলো হলো গাছের গুঁড়ি,পঁচা কাঠ,পঁচা ফলমূল ইত্যাদি।
বাংলাদেশে কৃত্রিম পদ্ধতিতে মাশরুম চাষ সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়
নিম্নে কৃত্রিম পদ্ধতিতে মাশরুম চাষের ধাপগুলো বর্ণনা করা হলোঃ
স্পন তৈরিঃ মাশরুমের বীজই হলো স্পন। আর এই মাশরুম চাষের জন্য স্পন তৈরী করতে হয়। স্পন তৈরি করার জন্য যে উপকরণগুলো লাগে, সেগুলো হলো ঘর কাঠের গুঁড়া, চালের কুড়া,ভুট্টার গুঁড়া, সরিষার খৈল ইত্যাদি উপকরণ।
স্পনের প্যাকেট তৈরি করতে হয়ঃ স্পন তৈরি করার জন্য প্যাকেটজাত করা হয়। আর এই প্যাকেটটা পলিথিন ব্যাগ ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
স্পনের প্যাকেট জীবন মুক্ত করুনঃ স্পনের প্যাকেট গুলো জীবাণুমুক্ত করা খুবই প্রয়োজন। আর এজন্য স্পনের প্যাকেটগুলো জীবণুমুক্ত করার জন্য ফুটন্ত পানিতে ৩০ মিনিট ফুটানো হয় বা ব্লিচিং পাউডার এবং চুন মিশানো পানিতে সাধারণত ভিজিয়ে রাখা হয়।
ওয়ান প্যাকেটে বীজ ছাড়ানোঃ প্যাকেট জীবাণুমুক্ত সম্পূর্ণ হওয়ার পরে ওয়ান প্যাকেটে মাশরুমের বীজগুলো ছড়িয়ে দেওয়া হয়।
স্পন প্যাকেটগুলো চাষের স্থানে রাখাঃ যখন বীজগুলো ছাড়ানো হয়ে জাবে, তখন চাষের স্থানে রাখা হয়। স্পন চাষের স্থানে আপনার তাপমাত্রা থাকতে হবে ১৮ থেকে ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং আদ্রতা থাকতে হবে ৮০ থেকে ৯০%।
ফলন সংগ্রহঃ মাশরুম সাধারণত চাষের ২ দিন সপ্তাহের মধ্যে ফলন দিয়ে থাকে। মাশরুমের ফলন সংগ্রহের জন্য মাশরুম যখন পূর্ণাঙ্গ আকার ধারণ করে তখন কেটে নেওয়া হয়।
মাশরুম চাষের জন্য যেসব উপকরণ সরঞ্জাম প্রয়োজন
- মাশরুমের বীজ লাগে
- স্পন তৈরির জন্য পলিথিন ব্যাগের প্রয়োজন হয়।
- স্পনের প্যাকেট জীবাণুমুক্ত করার জন্য ফুটন্ত পানির প্রয়োজন পড়ে
- ব্লিচিং পাউডার ও চুনের প্রয়োজন পড়ে।
- মাশরুম চাষের জন্য একটি ও উষ্ণ এবং আদ্রতাপূর্ণ স্থান লাগে
- মাশরুমের ফলন সংগ্রহের জন্য ধারালো ছুরি লাগে।
মাশরুম চাষের সুবিধা
- মাশরুম চাষ সাধারণত একটি লাভজনক ব্যবসা
- মাশরুম চাষ করার জন্য খুব বেশি পরিমাণ জায়গা প্রয়োজন হয় না
- এখন চাষ করার জন্য বেশি পরিমাণ শ্রম দিতে হয় না
- মাশরুম একটি প্রয়োজনীয় পুষ্টিকর খাবার
মাশরুম চাষের অসুবিধা
মাশরুম চাষ একটি লাভজনক উদ্যোগ। মাশরুম চাষের যেমন সুবিধা রয়েছে তেমনি অসুবিধা রয়েছে। নিম্নে মাশরুম চাষে অসুবিধা গুলো আলোচনা করা হলো-
মাশরুম চাষের জন্য পরিবেশগত অবস্থার প্রয়োজন পরে।একটি নির্দিষ্ট পরিবেশগত অবস্থা না থাকলে মাশরুম চাষের অসুবিধার সম্মুখীন হতে হয়। মাশরুম চাষের প্রয়োজনীয় পরিবেশগত অবস্থা হলো-
- উষ্ণতা ২০ থেকে ২৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস
- আদ্রতা ৮০ থেকে ৯০%
- আলো -অন্ধকার
- বাতাস পরিষ্কার এবং জীবাণুমুক্ত
এই পরিবেশগত অবস্থা গুলো বজায় রাখার জন্য বিশেষভাবে যত্ন নেওয়া প্রয়োজন। আর যদি এই পরিবেশগত অবস্থা বজায় না থাকে, তাহলে মাশরুমের ফলন কমে যেতে পারে এবং মাশরুম নষ্ট হয়ে যেতে পারে।
লেখকের শেষ মন্তব্য - মাশরুমের ১৫ টি ঔষুধিগুণ ও মাশরুম খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে
উপরোক্ত আলোচনার মাধ্যমে জানতে পারলেন যে, মাশরুমের ১৫ টি ঔষুধিগুণ ও মাশরুম খাওয়ার নিয়ম, মাশরুমের অপকারিতা, মাশরুম চাষে পদ্ধতি, মাশরুম চাষের সুবিধা ও অসুবিধা মাশরুম কোথায় পাওয়া যায়, দাম কেমন ইত্যাদি সম্পর্কে আশা করি বুঝতে পেরেছেন। মানুষের শুধু শরীর স্বাস্থ্য জন্যই না ভয়াবহ কঠিন রোগ গুলোর হাত থেকে বাঁচার জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণ হলো মাশরুম।
মাশরুমের উপকারিতার কথা বলে শেষ করা যাবে না। মাশরুম বিভিন্ন রোগের মহৌষুধ হিসেবে কাজ করে। তাছাড়া মাসরুম একটি সুস্বাদু এবং পুষ্টিকর সবজি।তাই প্রতিনিয়ত চেষ্টা করবেন নিয়মিতভাবে মাশরুম খাওয়ার।
মাহবুব আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন
comment url