দেশি জাতের গরু চেনার উপায়গুলো জেনে নিন
বাংলাদেশে দিনে দিনে দেশি জাতের গরুর চাহিদা প্রচুর পরিমাণে জনপ্রিয়তা বাড়ছে। দেশি জাত কিভাবে চেনা যায় সেই প্রশ্ন অনেকের কাছে ঘোরপাক খায় । তাই আজকে আমরা দেশি জাতের গরু চেনার উপায় গুলো আলোকপাত করবো।
বাংলাদেশের সাধারণত পাঁচ ধরনের বা পাঁচটি জাতের দেশি গরু পাওয়া যায়। এই জাতগুলোর মধ্য, স্থানীয় দেশি জাতের গরু,নর্থ বেঙ্গল গ্রে দেশি জাতের গরু, পাবনা ক্যাটল দেশি জাতের গরু, চট্টগ্রামের রেট চিটাগাং ক্যাটল জাতের গরু,মুন্সিগঞ্জের মীরকাদিম দেশি জাতের গরু। সাধারণত দেশী জাতের গরু গুলোতে চর্বির পরিমাণ কম থাকে।
পোস্ট সূচীপত্রঃ
পাবনা ক্যাটল দেশি জাতের গরু
পাবনা ক্যাটল দেখি জাতের গরুগুলো সাধারণত বাংলাদেশের পাবনা জেলাতেই বেশি দেখা যায়। এই গরুগুলো পাবনাতে ব্রিড করে থাকে বলে অনেকেই পাবনা ব্রিড বলে থাকেন। পাবনা ক্যাটল জাতের গরু গুলো সাধারণত ছোট এবং মাঝারি সাইঝের হয়ে থাকে। পাবনা ক্যাটল জাতের গরু গুলো বাচ্চা উৎপাদন ক্ষমতা অনেক বেশি পরিমাণে থাকে।এবং এই দেশি জাতের গরু গুলোতে রোগব্যাধির
পরিমাণ অনেকটা কম দেখা যায় বা কম পরিমাণ হয়। এ জাতের গরু গুলো সাধারণত ছাই রং এবং সাধারণ বের হয়ে থাকে। এ জাতের গরু গুলো বাজারে প্রচুর পরিমাণ চাহিদা রয়েছে এবং আকারে ছোট হয় বলে এর প্রচুর পরিমাণ জনপ্রিয়তা রয়েছে।বিশেষ করে দেশি জাতের গরু বলে।দেশের বড় কোন অনুষ্ঠান গুলোতে দেশি জাতের এই গরুগুলো প্রচুর পরিমাণে চাহিদা আছে। তাছাড়া মুসলমানদের
বছরে দুটি উৎসব ঈদুল ফিতর এবং ঈদুল আযহাতে প্রচুর পরিমাণে ক্যাটল এই দেশি জাতের গরুগুলো ক্রয় বিক্রয় হয়। এই জাতের গরু গুলোমূলত পদ্মা পাড়ের কয়েকটি জেলায় হয়ে থাকে বলে, এই গরুর জাতের পাবনা ক্যাটেলের সাদৃশ্য রয়েছে অনেক সময় সিরাজগঞ্জ ব্রিড বলা হয়।
আরো পড়ুনঃকীভাবে শাকসবজি খেলে আপনি অধিক পুষ্টিগুণ পাবেন
স্থানীয় দেশি জাতের গরু
বাংলাদেশের স্থানীয় দেশী জাতের গরুর চাহিদা সবচেয়ে বেশি। স্থানীয় দেশি জাতের গরু গুলোর উচ্চতা সাধারণত তিন থেকে ৪ ফিট হয়। বাংলাদেশের প্রায় প্রতিটা জেলাতেই স্থানীয় দেশি জাতের গরু লালন পালন করা হয় বা সব জেলাতেই এর দেখা পাওয়া যায়। স্থানীয় দেশী জাতের গরুগুলো সাধারণত রঙ্গে লাল ছাই এবং সাদা রঙের মিশ্রিত হতে দেখা যায়।
স্থানীয় দেশী জাতের গরু গুলোর সিংগুলো সাধারণত বড় এবং বাঁকানো প্রকৃতির হয়।স্থানীয় দেশী জাতের গরুগুলো গ্রাম-গঞ্জ-শহর প্রায় প্রতিটাই বাজারেই পাওয়া যায়। কেননা স্থানীয় দেশি জাতের গরুর চাহিদা অন্যান্য জাতের চেয়ে অনেক পরিমাণ বেশি। বাংলাদেশের মানুষ দেশি জাতীয় গরু গুলোকে বেশি পছন্দ করে
সেজন্য যেকোনো ছোট হোক বা বড় হোক অনুষ্ঠানে এই গরুগুলো প্রতি মানুষের অনেকটা টান থাকে। কেননা বিদেশি জাতের গরুগুলো অনেক বড় প্রকৃতির হয় এবং মাংসের স্বাদ দেশি গরুর তুলনায় অনেক কম হয় অপরদিকে দামের পরিমাণটাও বেশি হয়। তাই সব দিক বিবেচনা করে মানুষ দেশি জাতের গরুর প্রতি আকর্ষিত হয়।
নর্থ বেঙ্গল গ্রে দেশি জাতের গরু
নর্থ বেঙ্গল গ্রে দেশি জাতের গরুগুলো সাধারণত বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলে বেশি পরিমাণে দেখা যায়। উত্তরাঞ্চলের এই গরুগুলোর ব্যাপক পরিমাণে চাহিদা রয়েছে। নর্থ বেঙ্গল দেশি জাতের গরুগুলো সাধারণত সাদা ধূসর রং বা এর মাঝামাঝি রং এর হয়ে থাকে। এই গরুগুলো সাধারণত আকারের ছোট হয় এবং এ সিং গুলো মাঝারি প্রকৃতির হয় এবং ভেতরের দিকে বাঁকানো থাকে।
খামারিদের জন্য এই গরু লালন পালন করা একদমই সহজ এবং খাবারের পরিমাণও কম লাগে। আমাদের দেশ কৃষি প্রধান দেশ, আর এই জাতের গরু গুলো সাধারণত ক্ষেত খামারে খেয়ে থাকে। ফলে খামারিদের খাবারের যোগানের চাহিদা অতি সহজেই পূরণ হয়। এই গরুগুলো আকারে ছোট হলেও বাজারে ভালো দামে বিক্রয় করা যায় এবং এর প্রচুর পরিমাণে চাহিদাও রয়েছে।
আরো পড়ুনঃ গর্ভবতী মায়ের লিচু খাওয়ার উপকারিতা
চট্টগ্রামের রেড চিটাগাং ক্যাটল দেশি জাতের গরু
চট্টগ্রামের রেড চিটাগাং ক্যাটল দেশি জাতের গরু গুলো চট্টগ্রাম এবং এর আশেপাশের জেলাগুলোতেই পাওয়া যায়। অন্যান্য জায়গা গুলোতে এই গরুগুলো কমই দেখা যায়। চট্টগ্রামের রেড চিটাগাং ক্যাটল জাতের গরু গুলো খামারিদের বেশি পরিমাণ পছন্দ হয় কারণ এই জাতের গরু গুলোকে খাবারে পরিমাণ অল্প হলেও চলে। চট্টগ্রাম এবং আশেপাশের জেলা ব্যতীত অন্যান্য জেলাগুলোতে এই গরুর পরিমান অনেকটা কম দেখা যায়।
মুন্সীগঞ্জের মীরকাদিম দেশি জাতের গরু
মুন্সিগঞ্জের মীরকাদিম বেশি রাতের গরুগুলো মুন্সিগঞ্জ এবং জেলাগুলোতে শুধু পাওয়া যায়। এই গরুগুলো আকারে অনেকটা বড় প্রকৃতির হয় এবং এই গরুগুলোর রং সাদা বা ছাই কালার হয়ে থাকে। এই গরুগুলোর ভালো পরিমাণ চাহিদা রয়েছে। মুন্সিগঞ্জ ব্যতীত অন্যান্য জেলাগুলোতে এই গরুর দেখা যায় না বললেই চলে।
দেশি জাতের গরু চেনার উপায়
বাংলাদেশ সাধারণত দেশি জাতের গরুগুলো সহজে চেনা যায়। এই গরুগুলোর চামড়া শক্ত হয়। দেশী জাতের গরু গুলো প্রায়ই এক রঙেরই হয়ে থাকে। গলার নিচে চামড়াগুলো ঝুলে থাকে। সিংগুলো মাঝারি প্রকৃতির এবং বড় আকৃতির হয়। দেশি জাতের গরুগুলো দেখতে অনেকটা ছোট হয় আর ছোট হওয়ার কারণেই এই গরুগুলোকে সহজে চেনা যায়। বর্তমানে দেশি জাতের গরু গুলোর ব্যাপক
পরিমাণ চাহিদা রয়েছে। গ্রামগঞ্জে ও শহরে প্রায় প্রতিটি বাজারগুলোতেই দেশি গরু পাওয়া যায় এবং এর চাহিদা ও দামেও সাশ্রয় হয়ে থাকে। ফলে মানুষের আকর্ষণ থাকে এই গরুগুলোর প্রতি। তাছাড়া এই গরুগুলোর মাংসের স্বাদ অন্যান্য গরুর তুলনায় অনেক পরিমাণ বেশি তাই যেকোনো অনুষ্ঠানগুলোতে মাংসের জন্য দেশি জাতের গরু ক্রয় করে থাকে।
দেশি জাতের গরুর বৈশিষ্ট্য
দেশি জাতের গরুর বৈশিষ্ট্যর কথা বলতে গেলে বলতে হবে যে, এই দেশি জাতের গরুগুলো সাধারণত সাদা এবং ধূসর রং এর হয়ে থাকে। এই গরুগুলোর সিং বড় মাঝারি এবং বাঁকা হয়ে থাকে। দেশি গরুর চামড়াগুলো টাইট প্রকৃতির হয়। ফলে এই গরুগুলো সহজে চেনা যায় অন্যান্য গরু তুলনায়।
দেশি জাতের গরুর ওজন
একটি পূর্ণবয়স্ক দেশি জাতের গরুর ওজন সাধারণত প্রায় থেকে ২০০ কেজি পর্যন্ত হয়ে থাকে। যদিও অন্যান্য জাতের গরু গুলো ওজনের পরিমাণ বেশি থাকে কিন্তু তাদের তুলনায় বাংলাদেশের দেশি জাতের গরু গুলোর ওজন অন্য যাতে তুলনায় অনেকটা কম হয়ে থাকে। ওজনে কম হলেও অন্যান্য
যাতে তুলনায় দেশি জাতের গরু মাংসের স্বাদ অনেক পরিমান বেশি। তাই ওজনের দিক বিবেচনা না করে মানুষ দেশি জাতের গরু গুলোর প্রতি আকৃষ্ট বেশি হয়।
দেশি জাতের গরুর দুধের উপকারিতা
আপনারা জানেন অন্যান্য গরু তুলনায় দেশি জাতের গরুগুলোতে দুধের পরিমাণ কম হয়। তবে দুধের পরিমাণ কম হলেও এতে পুষ্টিগুণের পরিমাণটা অনেক বেশি। তাই দেশীয় গরুর দুধের চাহিদা অন্যান্য জাতের গরুর দুধের চেয়ে বেশি।
লেখকের শেষ কথা
প্রিয় পাঠকগণ বাংলাদেশের বিভিন্ন জাতের গরু রয়েছে এর মধ্যে দেশীয় জাতের গরু চেনার জন্য উপরোক্ত আলোচনায়, আশা করি বুঝতে পেরেছেন কিভাবে দেশীয় গরু চেনা যায়।দেশীয় গরু আকার, আকৃতি, ধরন সমস্ত বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে পুরো আর্টিকেলটি ভালো করে পড়েছেন এবং সহজেই বুঝতে পেরেছেন।
তথ্যনির্ভর নিত্যনতুন আপডেট পোস্ট গুলো পড়তে এবং জানতে আমাদের ওয়েবসাইটের সাথেই থাকুন এবং ফলো করুন। ধন্যবাদ...
মাহবুব আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন
comment url