ইউরিন ইনফেকশন থেকে মুক্তির ঘরোয়া উপায় জানুন এখনই
ইউরিন ইনফেকশন থেকে মুক্তির ঘরোয়া উপায় সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন? অনিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভাস এবং দূষণের কারণে ইউরিন ইনফেকশন সাধারণ সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। নিচে ইউরিন ইনফেকশনের কারণ এবং প্রতিকার সম্পর্কে জানতে আর্টিকেলটি পড়তে থাকুন।
জীবন ধারণের জন্য আমাদের প্রয়োজনীয় একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ হল কিডনি। মানুষের জন্য হৃদ-যন্ত্র এবং মস্তিষ্ক যেমন জরুরী, ঠিক তেমনি আমাদের জন্য দুটি কিডনিও জরুরী। নিচে ইউরিন ইনফেকশন থেকে মুক্তির ঘরোয়া উপায় জানতে পড়ুন।
পোস্ট সূচীপত্রঃ ইউরিন ইনফেকশন থেকে মুক্তির ঘরোয়া উপায় জানতে পড়ুন
- ইউরিন ইনফেকশন
- ইউরিন ইনফেকশনের লক্ষণসমূহ
- প্রস্রাবের সংক্রামণ দেখা দিলে ডাক্তারি পরামর্শ
- ইউরিন ইনফেকশনের কারণ
- ইউরিনারি ইনফেকশন প্রতিরোধের উপায়
- ইউরিন ইনফেকশন থেকে সহজে মুক্তির ঘরোয়া উপায়
- ঘরোয়া পদ্ধতিতে ইউরিন ইনফেকশন থেকে মুক্তির উপায়
- গর্ববস্থায় ইউরিন ইনফেকশন হলে যা করবেন
- ইউরিন ইনফেকশন রোগের চিকিৎসা
- ইউরিন ইনফেকশন প্রতিরোধ
- শিশুর প্রস্রাবের সংক্রামন
- ইউরিন ইনফেকশন জটিলতা
- বারবার ইউরিন ইনফেকশন হওয়া
ইউরিন ইনফেকশন
ইউরিন ইনফেকশনের লক্ষণসমূহ
ইউরিন ইনফেকশন নারী-পুরুষের উভয় হতে পারে তবে নারীদের ক্ষেত্রে ইউরিন ইনফেকশন হওয়ার প্রবণতাটা বেশি থাকে। নিম্নে ইউরিন ইনফেকশন এর লক্ষণসমূহ নিচে আলোচিত হলো।
- বমি ভাব বা বমি হওয়া
- প্রস্রাব গারো হলুদ হওয়া বা লালচে রং হওয়া
- প্রস্রাবে বাজে গন্ধ হওয়া
- রাতে প্রস্রাবের বারবার বেগ আসা
- প্রস্রবের সাথে রক্ত যাওয়া
- কোমরের পিছনে পাঁজরের ঠিক নিচের অংশে ব্যথা করা
- শরীরের তাপমাত্রা ৩৬° সেলসিয়াস বা 96.8 ডিগ্রি ফারেনহাইট এর চেয়ে কমে যায়
- ক্লান্তি এবং বমি বমি লাগা
- পিঠে তীব্র ব্যথা এবং তলপেটে ব্যথা
- একটু পর পরই প্রস্রাব লাগা কিন্তু ঠিকমতো প্রস্রাব না হওয়া
- সারাক্ষণ জ্বর জ্বর ভাব হওয়া এবং কাঁপুনি দিয়ে ঘন ঘন জ্বর আসা
- প্রস্রাব করার সময় জ্বালাপোড়া করা বা ব্যথা করা
যদিও নারীরা ইউরিন ইনফেকশন রোগে বেশি আক্রান্ত হয়ে থাকে, তবে নারী-পুরুষ উভয়ের এই রোগ হতে পারে। বিশেষ করে গরমকালে এই রোগটা বেশি দেখা যায়। গরমকালে মূত্রাশয় সংক্রমণ বেশি হয়ে থাকে। ইউরিন ইনফেকশনের অন্যতম প্রধান লক্ষণ হল প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া করা, কিডনিতে ব্যথা করা, কোমরে ব্যথা করা,তলপেটে ব্যথা করা প্রভৃতি ইত্যাদি। তবে আপনি যদি যথাযথ নিয়ম মেনে চলেন, তাহলে ইউরিনারি ইনফেকশন প্রতিরোধ করতে পারবেন।
আরো পড়ুনঃ সুস্থ থাকার জন্য প্রয়োজনীয় যে ৫ টি খাবার খেতে পারেন
প্রস্রাবের সংক্রামণ দেখা দিলে ডাক্তারি পরামর্শ
উপরে উল্লেখিত লক্ষণগুলো দেখা দিলে এবং পাশাপাশি নিচের লক্ষণ গুলো দেখা দিল দ্রুত ডাক্তার দেখাতে হবে।
- শরীরের তাপমাত্রা যদি অনেক পরিমাণ বেড়ে যায় কিংবা জ্বর লাগার সাথে শরীরে কাঁপুনি অনুভব হয়।
- আপনার শরীরের তাপমাত্রা যদি ৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা ৯৬.৮ ডিগ্রী ফারেনহাইট এর নিচে নেমে যায়।
- কথা যদি ঝিমিয়ে আসে বা মানসিক বিভ্রান্তি ঘটে তাহলে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে
- সারাদিন ধরে যদি প্রস্রাব বন্ধ থাকে তবে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে
- প্রস্রাবে রক্ত যাওয়া এমন হলে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে
- তলপেটে অথবা কোমরের পিছনে পাজরের ঠিক নিচের অংশে যদি ব্যথা করে ডাক্তার পরামর্শ দিতে হবে
ইউরিন ইনফেকশনের কারণ
আপনার বাসায় টয়লেটে থাকা বিভিন্ন ধরনের জীবাণু মূত্রতন্ত্রে প্রবেশ করে সাধারণত ইউরিন ইনফেকশন ঘটায়। এই জীবণু সাধারণত প্রবেশ করে প্রস্রাবের রাস্তা বা মূত্রনালী নালী দিয়ে। নারী-পুরুষ উভয়েরই প্রস্রাবের ইনফেকশন হতে পারে। তবে নারীদের ক্ষেত্রে ইউরিন ইনফেকশন হওয়ার সম্ভাবনাটা বেশি থাকে। এর কারণ হলো নারীদের মূত্রনালী এবং পুরুষদের
মূত্রনালী তুলনা করলে নারীদের মূত্রনালী দৈর্ঘ্য অনেক ছোট হয়। এছাড়া মেয়েদের মূত্রনালী পায়ুপথের খুব কাছাকাছি অবস্থান। আর এর ফলে ব্যাকটেরিয়া পায়ুপথ থেকে মূত্রনালীতে প্রবেশ করে। ফলে সংক্রমণ ঘটানোর সম্ভাবনাটা বেশি থাকে।
- যেসব কারণে ইউরিন ইনফেশনের সম্ভাবনা বেড়ে যায়
- আপনি যদি পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান না করেন
- যৌনাঙ্গ পরিষ্কার এবং শুকনো না রাখলে
- কিডনিতে পাথর হলে
- যেকোনো কারণে আপনার যদি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে গেলে
- টাইপ টু ডায়াবেটিকস অথবা এইচআইভি আক্রান্ত হলে
- কেমোথেরাপি অথবা দীর্ঘদিন ধরে আপনি যদি স্টেরয়েড জাতীয় ঔষুধ সেবন করেন।
- মাসিক চিরতরে বন্ধ হয়ে গেল। এই ঘটনাকে "মেনোপজ" বলা হয়। আর এক্ষেত্রে ইস্ট্রোজেন নামক হরমোন কমে যাওয়ার ফলে সংক্রমণ প্রবণতা বেড়ে যায়।
- সাধারণত যৌন সহবাস করলে
- প্রস্রাবের রাস্তায় নল বা ক্যাথেটার পড়ানো থাকলে
- মূত্রথলী পুরোপুরি খালি করতে বাধা সৃষ্টি করে যদি এমন রোগ হয়। যেমনঃ পুরুষদের প্রোস্টেট গ্রন্থি বড় হয়ে যাওয়া। শিশুদের কোষ্ঠকাঠিন্য অথবা স্নায়ুতন্ত্রের কোনো অসুখ।
ইউরিনারি ইনফেকশন প্রতিরোধের উপায়
ইউরিন ইনফেকশন থেকে মুক্তির ঘরোয়া উপায় জানা আপনার জন্য জরুরী। নিম্নে ইউরিন ইনফেকশন প্রতিরোধের বিভিন্ন উপায় রয়েছে সেগুলো বিস্তারিত আলোচনা করা হলো। আর্টিকেলটি পড়তে থাকুন-
আরো পড়ুনঃ সুস্থতা ও দীর্ঘ জীবন পেতে প্রতিদিন খান জীবন্ত খাবার
প্রচুর পানি পান করাঃ পানির অপর নাম হল জীবন। যেকোনো রোগের প্রতিরোধক হিসাবে পানির গুরুত্ব অপরিসীম। ইউরিনারি ইনফেকশন থেকে বাঁচার একমাত্র পথ হলো প্রচুর পরিমাণে পানি পান করা। অনেকেই মনে করে থাকেন যে, সারাক্ষণ তো জ্বালাপোড়া হচ্ছে না, কিন্তু শুধু টয়লেটে গেলেই এই সমস্যাটা হয়! এর কারণে টয়লেটে যাওয়া কমিয়ে দেন। কিন্তু এটার ফল আরো ভয়াবহ হয়।
গবেষণা জানা গেছে যে, প্রচুর পরিমাণে পানি পান করা শুধু মলত্যাগের সময় জ্বালাপোড়ায় কমায় না বরং ইউরিনারি ইনফেকশনগুলো দূর করে থাকে। তাই পানি খাওয়ার কোন বিকল্প নাই। আমরা সাধারণত অনেকেই বাড়ির বাইরে মুত্র-ত্যাগ করতে চাই না। আর এর ফলে প্রস্রাব আটকে রাখা হয় যার কারণে ইউরিনারি ইনফেকশনের হয়। প্রস্রাব যদি অনেক সময়
যৌন মিলনের আগে ও পরেঃ প্রায় অনেক মানুষেরই দেখা যায়, যৌন মিলনের পরে সাধারণত প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া হয়।মিলন করার আগে এবং পরে মূত্রত্যাগ করা ইউরিনারি ইনফেকশন রোধে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। পুরুষের চেয়ে নারী ক্ষেত্রে এটি সাধারণত বেশি কার্যকর হয়ে থাকে।
গরম পানিতে গোসলঃ ইউরানি ইনফেকশনের ফলে অনেক ব্যথা সৃষ্টি হয়।আর এই ব্যথা থেকে নিরাময়ের জন্য কুসুম কুসুম গরম পানিতে গোসল করলে অনেকের ক্ষেত্রে কার্যকারী ভূমিকা পালন করে।
ভিটামিন সিঃ আপনি যদি নিয়মিতভাবে ভিটামিন সি গ্রহণ করতে পারেন তাহলে কমিয়ে দিতে পারে ইউরিনারি ইনফেকশন এর সম্ভাবনা। ১০০০ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি গ্রহণ করলে, শরীরে যে পরিমাণ অম্ল উৎপন্ন হয়, তাতে মুত্রে ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমনের বিস্তার হ্রাস পায়।
স্বাস্থ্যবিধি পালনঃ শরীর স্বাস্থ্য সুস্থ রাখার জন্য স্বাস্থ্যবিধি পালন করা কোন বিকল্প নাই। সুতি কাপড় পরা, ঢিলে ডালা পোশাক পরা, নিয়মিত গোসল করা, সংশ্লিষ্ট এলাকার পথ পরিষ্কার রাখা ইত্যাদি খুবই জরুরী। ইউরিন ইনফেকশনের বিষয়ে কখনোই অবহেলা করা যাবে না কেননা পরবর্তীতে পস্তাতে হবে তাই। তাই দ্রুত চিকিৎসা নিন। দ্রুত চিকিৎসা নিলে আপনার প্রস্রাবের সমস্যা গুলো আশা করি দূর হয়ে যাবে।
ইউরিন ইনফেকশন থেকে সহজে মুক্তির ঘরোয়া উপায়
ইউরিন ইনফেকশনে ছেলেদের চেয়ে নারীরা বেশি আক্রান্ত হয়। মেয়েদের বেশি আক্রান্ত হওয়ার কারণ হলো ইউরিথ্রা বা মূত্রথলী পায়ুপথের খুব কাছাকাছি থাকে বলে মলদার দিয়ে নির্গত ব্যাকটেরিয়া খুব সহজেই প্রবেশ করে। মেয়েদের মূত্রনালী ছোট হওয়ার কারণে, ব্যাটারিয়া খুব সহজেই মূত্রথলীতে ও কিডনিতে পৌঁছে ইনফেকশন ঘটাতে পারে। প্রস্রাব পরীক্ষা করার
মাধ্যমে মূত্রথলীর সংক্রামন নির্ণয় করা হয়ে থাকে। এন্টিবায়োটিক এর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া বলা বাহুল্য।জীবনের সংক্রমণ হলে ডাক্তার আপনাকে এন্টিবায়োটিক সেবন করতে দিবেন। যেমন ডায়রিয়া, বমি,চুলকানি হওয়া ইত্যাদি। এই সমস্যাগুলো যদি প্রাথমিক অবস্থায় ধরা পড়ে তাহলে এর থেকে দ্রুত সমাধান পাওয়া যায়। এই ইনফেকশন কিডনি,মূত্রনালী
একাধিক অংশে একসঙ্গে একই ধরনের হতে পারে। সংক্ষেপে ইনফেকশন কে ইউরিন ইনফেকশন বলা হয়ে থাকে। এই ইনফেকশন নারী-পুরুষের উভয়ের হতে পারে তবে নারীদের মধ্য ইরিন ইনফেকশন আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনাটা বেশি থাকে।
আরো পড়ুনঃ ইলিশ মাছের উপকারিতা,অপকারিতা- ইলিশ চেনার উপায়
ঘরোয়া পদ্ধতিতে ইউরিন ইনফেকশন থেকে মুক্তির উপায়
আমরা এমন কিছু ঘরোয়া পদ্ধতির কথা জানবো, যেগুলো ব্যবহার করে মূত্রনালী সংক্রমণ থেকে পরিপূর্ণভাবে মুক্তি পাওয়া যাবে। নিম্নে আলোচনা করা হলো ইউরিন ইনফেকশন থেকে মুক্তি পাওয়ার উপায়গুলো।
প্রচুর পানি পান করুনঃ যেসব মানুষদের ইউটিআই রয়েছে তাদের প্রচুর পরিমাণে পানি পান করা উচিত। বেশি পরিমাণ পানি যদি পান করেন তাহলে প্রস্রাবের বেগ বৃদ্ধি পায় । এবং প্রস্রাবের এই বেগের সাথে ব্যকটেরিয়া বের হয়ে যায়।
কিছু সেলারি বীজ চিবানঃ মূত্র-বর্ধক হিসাবে সেলারি বীজ কাজ করে। একমুঠো পরিমাণ সেলারি বীজ চিবিয়ে রস খেতে পারেন। এক কাপ গরম পানিতে সেলারি বীজ, দিয়ে ঢেকে রাখুন এরপর ৮ মিনিট পর মিশ্রণটি ছেঁকে নিয়ে তারপর পান করুন। সেলারি বীজ ইউটিআই প্রতিরোধ করে থাকে।
সোডা পান করুনঃ কোন ধরণের ড্রিংকের কথা বলছি না, বেকিং সোডার কথা বলছি। এক গ্লাস পরিমাণ পানিতে এক চামচ বেকিং সোডা মিশিয়ে সপ্তাহে একদিন। সকালবেলা পান করতে পারেন এর ফলে প্রস্রাবের জ্বালা পোড়া কমে যাবে।
গরম ছ্যাঁক দিনঃ হট ওয়াটার ব্যাগগুলোতে গরম পানি নিয়ে তল পেটের উপরে রাখুন। এতে করে খুব দ্রুত প্রস্রাবের জ্বালাপোড়া এবং ব্যথা দূর হয়ে যাবে।
শসা খানঃ শসাতে প্রচুর পরিমাণে পানি থাকে। প্রতিদিন কমপক্ষে একটি শসা প্লাইস করে খেতে পারেন, এর ফলে অনেক উপকার পাবেন।
আরামজাত পোশাক পড়ুনঃ স্যাঁতস্যাঁতে জায়গায় সাধারণত ব্যাকটেরিয়া জন্ম হয়। সুতি কাপড়-চোপড় পড়লে বা ঢিলা পোশাক পরলে স্পর্শকাতর অন্ধ ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধি ব্যবহৃত হতে পাভাবস্থা
গর্ভাবস্থায় ইনফেকশন হলে যা করবেন
গর্ভাবস্থায় যে কোন নারী শারীরিক অসুস্থ এবং জটিলতার মধ্য দিয়ে যেতে হয়। এর সাথে যদি আবার কেউ ইউরিন ইনফেকশনের মত রোগে আক্রান্ত হয়, তবে তার গর্ভকাল নিদারুণ যন্ত্রণাময় হয়ে উঠবে। তবে আগে থেকেই যদি সচেতন থাকা যায়, তবে গর্ভাবস্থায় রোগ থেকে সহজে মুক্ত রাখা যায়। গর্ভাবস্থায় ইউরিন ইনফেকশনের ইটি বৃত্তি নিয়ে আলোচনা করা হলো।
ইউরিন ইনফেকশন কিঃ ইউরিন ইনফেকশন বলতে সাধারণত ইউরিনারি সিস্টেমে, যে কোনো অঙ্গের ইনফেকশন হওয়াকে বুঝায়। এই ইউরিনারি সিস্টেমের মধ্য রয়েছে কিডনি, ইউরেটার, মূত্রথলী, ইউরেথ্রা ইত্যাদি। ইউরিন ইনফেকশনের জন্য সাধারণত ব্যাকটেরিয়া দায়ী থাকে। ইউরিন ইনফেকশনে সবচেয়ে বেশি নারীরা আক্রান্ত হয়ে থাকে। গর্ভাবস্থায় নারীদের একটি সাধারণ সমস্যা। ইউরেথ্রা
আর ব্লাডারেই এই ইনফেকশন সবচেয়ে বেশি দেখা যায় যা ঝুঁকিপূর্ণ নয়। তবে কিডনি পর্যন্ত যদি এই ইনফেকশন ছড়িয়ে পড়ে তবে এটি অবশ্যই চিন্তার বিষয় কারণ এটা কি হতে পারে প্রিম্যাচিউর। এবং কম ওজনের শিশু জন্মের মত ঘটনা।
ইউরিন ইনফেকশন কেন হয়ঃ আমাদের শরীরে বৃহদন্তে অবস্থিত ই.কোলাই ব্যাকটেরিয়া সংক্রমনের ফলে এই ইনফেকশন হয়ে থাকে। প্রোটিয়াস ব্যাকটেরিয়াও এর জন্য দায়ী হতে পারে। কিছু কিছু পরজীবীরাও এই ইনফেকশন ছড়িয়ে থাকে। আবার অনেক সময় দেখা যায় যে আক্রান্ত রোগীর কারণে এ ধরনের ইনফেকশন হতে পারে যখন শরীর ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণ ঠেকানোর ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে।
গর্ভাবস্থায় ইউরিন ইনফেকশনটি স্বাভাবিকঃ গর্ভাবস্থায় গর্ভবতী মায়ের নানা ধরনের হরমোন নির্গত হয়। তাছাড়া ভ্রণের টিকে থাকার জন্য সাধারণ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা পরিমাণ কমে যায়। ফলে ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণে ইউরিন ইনফেকশন হয়ে থাকে। এই সময়ে গর্ভবতী মায়ের ইউটেরাস বড় হতে থাকে। এর ফলে ইউরেটারে চাপ লেগে মূত্র আটকে সাধারণত ইউরিন ইনফেকশন হতে পারে। গর্ভাবস্থায় এটি স্বাভাবিক সমস্যা হলেও এর যদি দ্রুত সঠিক চিকিৎসা না করানো হয়। তবে কিডনি পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়তে পারে যা গর্ভস্থ শিশুর জন্য খুবই ঝুঁকিপূর্ণ।
গর্ভাবস্থায় ইউরিন ইনফেকশন হলে তা নিরিক্ষণ করা হয় কিভাবেঃ ইউরিন ইনফেকশন আছে কিনা সেটা জানার জন্য ডাক্তার প্রস্রাব পরীক্ষা বা ইউরিন এনালাইসিস দিতে পারে। যা গর্ভবতী মহিলাদের জন্য মোটেও ঝুঁকিপূর্ণ নয়। এই পরীক্ষার মাধ্যমে প্রস্রাবে ব্যাকটেরিয়া আছে কিনা এবং শেত রক্তকণিকা আছে কিনা সেটা জানা যায়। এছাড়া ডাক্তার তার পরীক্ষা করার মাধ্যমে কি ধরনের ব্যাকটেরিয়া আক্রমণ করেছে সেটি সাধারণত জানা যায় এবং তার উপর ভিত্তি করে এন্টিবায়োটিক দেওয়া যায়।
ইউরিন ইনফেকশন রোগের চিকিৎসা
একজন গর্ভবতী মহিলার জন্য সব ধরনের ওষুধ ঝুঁকিমুক্ত নয়। তাই সাধারণত ডাক্তাররা এই সময়ে এন্টিবায়োটিক দিয়ে থাকে। এমকজিসিলিন পেনিসিলিন,এরিথ্রোমাইসিন, এ ধরণের এন্টিবায়োটিকগুলো গর্ভাবস্থায় নিরাপদ বলে ডাক্তাররা এগুলো প্রেসক্রাইব করে থাকেন। ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী এই ঔষুধগুলো খেলে তিন থেকে সাত দিন এর ভিতরে ইনফেকশন
নিরাময় হয়ে যায়। তবে সব সময় বিশেষভাবে খেয়াল রাখতে হবে যে, ডাক্তার যে কয়দিন ঔষুধ গুলো খেতে পরামর্শ দিবেন। সেই কয়েক দিনে ওষুধ চালিয়ে যেতে হবে।কোনভাবেই সেই ঔষুধগুলো একবেলাও খাওয়া বন্ধ করা যাবে না। এছাড়া গবেষণায় দেখা গেছে যে, সালফামেথোক্সাজোল, ট্রাইমেথোপ্রিম, সিপ্রোফ্লোক্সাসিন, টেট্রাসাইক্লিন, ইত্যাদি এন্টিবায়োটিক গুলো
গর্ভাবস্থায় ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। তাই কোন সময়টাতেই ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া একদমই ঔষুধ গ্রহণ করা উচিত নয়। যদি গর্ভধারণের আগে কখনো ইউরিন ইনফেকশন হয়ে থাকে, তবে যে ঔষুধের রোগ নিরাময় হয়েছিল, সিটি গর্ভাবস্থায় খাওয়া যাবে কিনা পরামর্শ অনুযায়ী নিশ্চিত হয়ে নিতে হবে।
কতদিন ওষুধ সেবন করতে হয়ঃ ইউরিন ইনফেকশন হলে সাধারণত বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তিনদিন থেকে একসাথে এন্টিবায়োটিক খাওয়ার জন্য পরামর্শ দেওয়া হয়। তবে ইনফেকশনের কারণ ও ধরণের উপর ভিত্তি করে বেশি সময় ধরে চিকিৎসা চালিয়ে যাওয়ার প্রয়োজন হতে পারে । ক্ষেত্রবিশেষে ইউরিন ইনফেকশনের জন্য কয়েক মাস ধরেও এন্টিভাইটিক সেবন করা লাগতে পারে। গুরুতর ইউনিয়নের
ইনফেকশন হলে রোগীকে পরীক্ষা নিরীক্ষা করে দ্রুত চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেক্ষত্রে হাসপাতালে থেকে চিকিৎসা নেওয়ার প্রয়োজন পরতে পারে। ইউরিন ইনফেকশন কে সহজেভাবে নেওয়া যাবে না কেননা এটা গুরুতর রূপ ধারণ করতে পারে। তাই লক্ষণগুলো ব্যাপারে খুবই সাবধানতা অবলম্বন করবেন।
আরো পড়ুনঃ গর্ভাবস্থায় কামরাঙ্গা খাওয়ার উপকারিতা- অপকারিতা ও পুষ্টিগুণ
ইউরিন ইনফেকশন প্রতিরোধ
নিম্নে ইউরিন ইনফেকশনের প্রতিরোধ ব্যবস্থা নিচে আলোচনা করা হলো পড়তে থাকুন।
ইউরিন ইনফেকশনের যা যা করবেন দেখে নিন
- প্রচুর পরিমাণে পানি পান করতে হবে। অন্তত ৮ থেকে ৯ গ্লাস পানি পান করলে ইউরিনারি সিস্টেমকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করবে।
- প্রিজারভেটিভ যুক্ত খাবার যেমনঃ পরিশোধিত চিনি, প্যাকেটজাত ফলের জুস, ক্যাফেইন কোমল পানীয়
- আর ডাঃ পরামর্শ অনুযায়ী ভিটামিন সি, ক্যারোটিন বি, জিঙ্ক ইত্যাদি খাওয়া যেতে পারে।
- মূত্রচাপের সাথে সাথে মূত্র ত্যাগ করতে হবে
- সঙ্গমে এর আগে এবং পরে মূত্রনিঃসরণ করা উচিত
- সবসময় ঢিলেঢালা পোশাক ও প্যান্ট পরা উচিত
- সময় মত অন্তরবাস পরিবর্তন করা উচিত
- প্রস্রাবের জায়গা শুকনা রাখতে হবে,প্রয়োজনে টিস্যু ব্যবহার করতে হবে
- গোসলখানায় ৩০ মিনিটের বেশি সময় ধরে গোসল করা উচিত নয়
যা যা করবেন না
- আপনার যদি প্রস্রাবে বেগ আসে তবে ধরে রাখবেন না।
- সাধারণত প্রস্রাব করার সময় তাড়াহুড়া করবেন না
- টাইট কাপড়-চোপড় পরবেন না
- আঁটসাঁট পায়জামা পরবেন না
- চিনিযুক্ত খাবার এবং পানীও জাতীয় খাবার খাবেন না। কারণে এতে জীবাণু বেড়ে উঠতে সাহায্য করে।
- যেসব কনডম অথবা ডায়াফ্রামে শুক্রাণু ধ্বংস করার পিচ্ছিলকারক থাকে সেগুলো ব্যবহার করবেন না। কিন্তু এর পরিবর্তে আপনি বিভিন্ন ধরনের কনডম ও লুব্রিক্যান্ট কিংবা জন্মনিয়ন্ত্রণের পদ্ধতিগুলো ব্যবহার করতে পারেন।
সব সময় মনে রাখতে হবে চিকিৎসা চাইতে প্রতিরোধই সবচেয়ে উত্তম
আরো পড়ুনঃ জলপাই ফলের পুষ্টিগুণ- উপকারিতা এবং সতর্কতা জেনে নিন
শিশুর প্রস্রাবের সংক্রামণ
এন্টিবায়োটিক দিতে হবে। সঠিক এন্টিবায়োটিকে প্রস্রাবের সংক্রমণ ও চিকিৎসা হলে রোগী অতি দ্রুত সুস্থ হয়ে যায়। আগে বলা হয়েছে এতে কিডনির ক্ষতি হয় তাই সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে।
প্রস্রাবের সংক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে করণীয়
- চার ঘন্টা পর পর প্রস্রাবের অভ্যাস গড়ে তুলুন
- প্রতিবার খাওয়ার আগে এবং ঘুমানোর আগে প্রস্রাব করার অভ্যাস করতে হবে
- কাপুড়ের প্যান্টগুলো ব্যবহার করতে হবে, প্যান্ট ঢিলা এবং হালকা থাকতে হবে
- নিয়মিত গোসল করতে হবে এবং কাপড়-চোপড় প্রচুর পরিষ্কার রাখতে হবে
- কোষ্ঠকাঠিন্য এবং কৃমির চিকিৎসা করাতে হবে
- প্রস্রাব পায়খানার পর শিশুকে ভালোভাবে পরিষ্কার করে নিতে হবে
- স্কুলগামী শিশুকে স্কুলের টয়লেট ব্যবহার করতে অভ্যস্ত করতে হবে
- প্রচুর পানি ও তরল খাবার খাওয়াতে হবে
ইউরিন ইনফেকশন জটিলতা
আপনি যদি ইউরিন ইনফেকশনের চিকিৎসা না করেন, তাহলে বিভিন্ন ধরনের জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে। এমনকি এই ইনফেকশন কিডনিতে পৌঁছে গিয়ে কিডনির স্থায়ী ক্ষতি করতে পারে। এছাড়া ইনফেকশন যদি রক্তে ছড়িয়ে পড়ে তাহলে "সেপসিস" নামক মারাত্মক জটিলতা দেখা দিতে পারে। এ ক্ষেত্রে রোগীর জীবন বিপন্নও হতে পারে। তাই ইউরিন
ইনফেকশন রোগের সঠিক সময়ে চিকিৎসা নেওয়া খুবই জরুরী। ইরান ইনফেকশন যদি পুরুষদের ক্ষেত্রে বারবার হয় তবে মূত্রনালী শুরু হয়ে যেতে পারে। এতে মন্ত্র তন্ত্রের জটিলতার পাশাপাশি যৌন প্রজনন সংক্রান্ত যাবতীয় সমস্যা দেখা দিতে পারে। এছাড়া গর্ভবতী মহিলাদের ক্ষেত্রে কিডনির ইনফেকশন সহ নানান জটিলতা দেখা দিতে পারে। যেমন উদাহরণস্বরুপ-
জন্মের সময় শিশুর ওজন কম হওয়া, নির্ধার সময়ের অনেক আগেই বাচ্চা প্রসব( প্রিম্যাচুর বেবি) হওয়া।
বারবার ইউরিন ইনফেকশন হওয়া
আপনি যদি চিকিৎসা নেওয়ার পরও আবারো ইউরিন ইনফেকশন হয়। তবে বিভিন্ন ধরনের পরীক্ষা নিরীক্ষা করানোর প্রয়োজন। এক্ষেত্রে আপনাকে বিশেষ অ্যান্টিবায়োটিক সেবনে পরামর্শ দেওয়া হতে পারে। মেনোপজের কারণে প্রস্রাবে যদি জ্বালাপোড়া হয় তবে মাসিকের রাস্তায় ইস্ট্রোজেন ক্রিম ব্যবহার করার পরামর্শ দেয়া হতে পারে।
লেখকের শেষ মন্তব্য - ইউরিন ইনফেকশন থেকে মুক্তির ঘরোয়া উপায় সম্পর্কে
উপরোক্ত আলোচনায় জানতে পারলাম যে, ইউরিন ইনফেকশন থেকে মুক্তির ঘরোয়া উপায়, ইউরিন ইনফেকশন কি, ইউরিন ইনফেকশনের লক্ষণ,ইউরিন ইনফেকশনের কারণ, ইউরিন ইনফেকশনের প্রতিকার, ইউরিন ইনফেকশনের চিকিৎসা, ইউরিন ইনফেকশনের জটিলতা, ইউরিন ইনফেকশন এর প্রতিরোধ ইত্যাদি সম্পর্কে আশা করি বুঝতে পেরেছেন। আপনার যদি ইউরিন ইনফেকশন জাতীয় কোন সমস্যা হয়।
তবে বসে না থেকে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নিন এবং ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী সঠিক সময়ে চিকিৎসা নিন। তাহলে ইউরিন ইনফেকশন থেকে পরিত্রাণ পাবেন। একটা বিষয় মাথায় রাখবেন আপনি যদি ইউরিন ইনফেকশন কে হালকাভাবে নেন তবে পরবর্তী সময়ে জীবনহানিও ঘটতে পারে।
মাহবুব আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন
comment url