গাব ফলের যত উপকারিতা ও পুষ্টিগুণ জানুন

গাব ফলের যত উপকারিতা ও পুষ্টিগুণ রয়েছে সে সম্পর্কে অনেকেই জানতে চান। গাব একটি দেশীয়, সুস্বাদু, মিষ্টি এবং কোষযুক্ত ফল। এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আপনাদেরকে জানাবো গাব ফলের যত উপকারিতা ও পুষ্টিগুণ গুলো রয়েছে সেগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত পড়ুন।


গাব দেখতে সাধারণ ফল হলেও এর প্রচুর পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা রয়েছে যা আমাদের শরীরকে নানা রোগ থেকে রক্ষা করেন। ডায়াবেটিস,হৃদরোগ থেকে শুরু করে বিভিন্ন প্রকার অসুখ-বিসুখ প্রতিরোধ করে থাকে গাব।নিচে গাফলের যত উপকারিতা ও পুষ্টিগুণ রয়েছে জানতে পড়ুন।

পোস্ট সূচীপত্রঃ গাব ফলের উপকারিতা ও পুষ্টিগুণ জানতে পড়ুন।

গাবের পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা নিয়ে কিছু কথা

গাব ফল দেখতে সাধারণ হলেও এর পুষ্টিগুণ আর স্বাদ মোটেও কিন্তু সাধারণ নয়। অন্যান্য ফলের চেয়ে গাবে অনেক বেশি পুষ্টিগুণ রয়েছে, যেগুলো সম্পর্কে প্রায় অধিকাংশ মানুষের ধারণা নেই। গাবের এই পুষ্টিগুণগুলো শরীরের বিভিন্ন রোগ থেকে রক্ষা করে থাকে। গাব ডায়াবেটিকস রোগীর জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের দেশে গ্রামগঞ্জে এখনো প্রচুর পরিমাণে গাব গাছ

রয়েছে। ফেরিওয়ালারা ভ্যানে করে গাব বিক্রি করে থাকে।  যদিও গাবের অর্থনৈতিক গুরুত্ব নেই। তবে গাব ফলে রয়েছে প্রচুর উপকারিতা। গাব ফলের যত উপকারিতা ও পুষ্টিগুণ রয়েছে  সেগুলো সম্পর্কে আজকে আমরা এই আর্টিকেলটির মাধ্যমে তুলে ধরার চেষ্টা করবো।

আরো পড়ুনঃ গর্ভবতী মায়ের পুষ্টিকর খাবার তালিকাগুলো জেনে নিন

গাব ফলের যত উপকারিতা 

গাব ফলের প্রচুর উপকারিতা রয়েছে সেগুলো সম্পর্কে প্রায় অধিকাংশ মানুষ জানে না। তাই আপনাদের কে গাব ফলের যত উপকারিতা ও পুষ্টিগুণ রয়েছে সেগুলো সম্পর্কে জানাবো বিস্তারিত নিচে পড়তে থাকুন।

শারীরিক দুর্বলতা কমায়

গাবে উচ্চমাত্রার খাদ্য শক্তি থাকায়, আপনার শরীরের দুর্বলতা কমিয়ে আনতে সাহায্য করবে। গাবে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম যা আপনার হাড়কে মজবুত করবে। আপনার রক্তচাপ এবং ডায়াবেটিকস নিয়ন্ত্রণে গাব কার্যকারী ভূমিকা পালন করবে। তাই গাব খাওয়ার কোন বিকল্প নেই। যদিও এটি মৌসুমি ফল,তবে অবশ্যই গাবের মৌসুমে গাব খাওয়ার কোনো বিকল্প নেই। বিশেষ করে যারা ডায়াবেটিস এবং হৃদরোগে আক্রান্ত তাদের জন্য গাব ফলটি খুবই জরুরী।

গাব রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে 

গাব ফলে যত উপকারিতা অপ দৃষ্টিকোণ রয়েছে তার মধ্য রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি এটি অন্যতম। কেননা গাবে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি এবং ভিটামিন এ। আর এগুলো অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বৃদ্ধি এবং ত্বকের জন্য ক্ষতিকর রেডিক্যাল কমিয়ে, শরীরের জন্য রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। গাবে যে দুই ধরনের ভিটামিন রয়েছে, সেগুলো বয়সের ছাপ পড়তে দেয় না এবং জটিল রোগ প্রতিরোধ করতে ও ত্বকের সুস্থতার জন্য বিশেষ কার্যকরী। 

গাব ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায় 

গাবে প্রচুর পরিমাণে আঁশ থাকায় কোষ্ঠকাঠিন্যর মত সমস্যাগুলো দূর করে থাকে। এছাড়াও শরীরের বিভিন্ন রোগ এবং কোলন ক্যান্সারের ঝুঁকি ঘুমিয়ে থাকে। তাই চেষ্টা  করবেন অন্যান্য ফলের খাবারের তালিকায় গাব রাখার। গাব শুধু ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায় না আর অন্যান্য রোগের প্রতিরোধ হিসেবে কাজ করে। গাব ফলের যত উপকারিতা রয়েছে তার মধ্যে এটি অন্যতম। 

রক্ত চলাচলে উন্নতি ঘটায়

গাবে প্রচুর পরিমাণে আয়রন রয়েছে যা দেহের লোহিত কণিকার কোষের উন্নতি ঘটিয়ে থাকে। গাব দেহের গুরুত্বপূর্ণ টিস্যুগুলোতে অক্সিজেন প্রবাহ বৃদ্ধিতে কার্যকারী ভূমিকা পালন করে। এছাড়াও গাব দেহের পেশী গঠন, চুলের বৃদ্ধি এবং হজম প্রক্রিয়াতে উন্নতি ঘটায়। 

হাইপার টেনশন কমিয়ে থাকে 

গাব ফলের যত উপকারিতা ও পুষ্টিগুণ রয়েছে তার মধ্যে হাইপার টেনশন কমিয়ে আনাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। গাবে উচ্চমাত্রার পটাশিয়াম উপাদান যা আপনার রক্ত সঞ্চালনের উন্নতি ঘটিয়ে থাকবে। গাব খাওয়ার ফলে আপনার শরীরের রক্ত প্রবাহ ঠিক রাখবে এবং কার্ডিওভাসকুলার সিস্টেমের উপরে চাপ কমাবে এমনকি আপনার রক্তচাপ কমাতেও বিশেষভাবে সাহায্য করবে।


গাবে আঁশ থাকায় আপনার শরীরের কোলেস্টেরল মাত্রা কমাবে। এছাড়া আপনার হার্ড অ্যাটাক, রক্তচাপ, স্ট্রোকের  ঝুঁকি কমিয়ে আনতে কার্যকারী ভূমিকা পালন করবে। 

হজমে সহায়ক

গাবে প্রচুর পরিমাণে আঁশ থাকায় হজম প্রক্রিয়ার উন্নতিতে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে থাকে। আপনার কোষ্ঠকাঠিন্য এবং অন্যান্য গ্যাস্ট্রিক জাতীয় সমস্যা গুলো গাব খাওয়ার ফলে  দূর হয়ে যাবে। তাই গাব আবার চেষ্টা করুন প্রতিদিন ফলের খাবারের তালিকাতে নিয়মিত গাব রাখুন। 

ত্বকের যত্নে 

গাব আপনার রূপচর্চার উপাদান হিসাবে ব্যবহার করতে পারবেন। তাহলে আপনার ত্বকের প্রদাহ কমিয়ে আনবে। এছাড়ো গাব খাওয়ার ফলে  সর্দি,কাশি থেকেও মুক্তি পাওয়া যায়। গাব খাওয়ার ফলে বুকে রক্ত জমাট বাঁধতে দেয় না। এছাড়াও আপনার অ্যাজমা দূর করবে। গাবে উচ্চমাত্রার ভিটামিন ও খনিজ উপাদান থাকায় রোগ প্রতিরোধ প্রক্রিয়ার উন্নতি ঘটায়। গাব গাছের ছাল আমাশয় এবং পেটেরনঅসুখের জন্য বিশেষ উপকারী।

আরো পড়ুনঃ মুখের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধির ঘরোয়া উপায় এবং কিছু টিপস জানুন

গাব ফলের পুষ্টিগুণ

গাব ফলের যত উপকারিতা ও পুষ্টিগুণ রয়েছে সে সম্পর্কে আপনাদের সামনে তুলে ধরা হয়েছে। তবে গাব ফলের আরো উল্লেখযোগ্য পুষ্টিগুণ তুলে ধরা হলো।

পুষ্টি উপাদান
খাদ্যশক্তি ৫০৪ কিলোক্যালোরি
জলীয় অংশ ৮৩.০ থেকে ৮৪.৩ গ্রাম
আমিষ ২.৮ গ্রাম
চর্বি ০.২ গ্রাম
শর্করা ১.১৮ গ্রাম
খাদ্য আঁশ ১.৮ গ্রাম
চিনি ১১.৪৭ গ্রাম
ক্যালসিয়াম ৪৬ মিলিগ্রাম
ভিটামিন এ ৩৫ আইইউ
ফসফরাস ১৮ মিলিগ্রাম
আয়রন ০.৬ মিলিগ্রাম
থায়ামিন ০.০২ মিলিগ্রাম
ভিটামিন সি ১৮ মিলিগ্রাম
সোডিয়াম ১১০ মিলিগ্রাম
পটাশিয়াম ৩০৩ মিলিগ্রাম

গর্ভাবস্থায় গাব খাওয়ার উপকারিতা 

গর্ভাবস্থায় গাব ফলের যত উপকারিতা ও পুষ্টিগুণ রয়েছে এবং গর্ভাবস্থায় গাব খাওয়ার উপকারিতা গুলো নিচে উল্লেখ করা হলো।

ভিটামিন ও খনিজঃ গাবে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি, ভিটামিন এ, এবং বিভিন্ন প্রকার খনিজ উপাদান। যেমন: ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম যা গর্ভাবস্থায় একজন মায়ের জন্য এবং তার অনাগত শিশুর স্বাস্থ্যর জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

অ্যান্টিঅক্সিডেন্টঃ গাবে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। যা গর্ভাবস্থায় গর্ভবতী মায়ের শরীরের বিভিন্ন রোগ থেকে রক্ষা করতে, কার্যকরী ভূমিকা পালন করা। 

হজমে সমস্যা দূর করেঃ গাব গর্ভাবস্থায় গর্ভবতী মায়ের হজম প্রক্রিয়াকে উন্নত করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যাগুলো থেকে দূর করে থাকে।

আরো পড়ুনঃ খালি পেটে আমলকি খাওয়ার ১৫টি অলৌকিক উপকারিতা

গাব ফল খাওয়ার নিয়ম 

গাব ফল খাওয়ার কিছু নিয়ম কানুন রয়েছে, আপনার যদি সেগুলো মেনে চলেন তাহলে ভালো উপকার পাবেন। গাপ ফল খাওয়ার নিয়ম জেনে নেওয়া যাক পড়তে থাকুন।

গাব ফল পরিষ্কার করাঃ আপনি যখন গাব ফলটি খাবেন তখন অবশ্যই ভালোভাবে পরিষ্কার করে নিতে হবে। যেন কোন রাসায়নিক পদার্থ ফলটিতে না থাকে।  

গাব খাওয়ার পরিমাণঃ আপনি প্রতিদিন একটি থেকে দুটি গাব ফল খেতে পারেন এটাই নিরাপদ। প্রয়োজনের তুলনায় অতিরিক্ত গাব কখনই খাবেন না। 

খালি পেটে নয়ঃ গাব ফল খালি পেটে না খাওয়াই ভালো। সবসময় চেষ্টা করবেন কিছু খাবার পরে গাব ফলটি খাওয়ার। 

গাব ফলটি বিভিন্নভাবে খাওয়া যায়ঃ আপনি সরাসরি খেতে পারেন এবং সালাদ হিসেবে খেতে পারেন। 

খাওয়ার ক্ষেত্রে পরামর্শঃ গর্ভাবস্থায় আপনি যখন গাব ফলটি খাবেন, তবে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে খাওয়াটাই ভালো। 

গাব গাছের ফল

গাব ফলের যত উপকারিতা ও পুষ্টিগুণ  সে সম্পর্কে জানা প্রতিটি মানুষের জানা প্রয়োজন। গাছের ফল অতি মিষ্টি  এবং সুস্বাদ রয়েছে। গাব ফল একটি আঁশযুক্ত ফল এর উপকারিতা অনেক। যা আমরা উপরের আলোচনাতে বলেছি। তাই নিয়মিত ফলের খাবার তালিকাতে রাখতে পারেন গাব।

গাব গাছের উপকারিতা 

গাছের অনেক উপকারিতা রয়েছে যেগুলো সম্পর্কে অনেকেই ধারণা রাখে না। আপনাদের সুবিধার্থে গাব গাছের কিছু উল্লেখযোগ্য উপকারিতাগুলো তুলে ধরা হলো। 

ঔষুধি গুণাগুণঃ গাব গাছের ছাল এবং পাতা বিভিন্ন ধরনের রোগের ঔষধি গুণে সমৃদ্ধ। সর্দি, কাশি এবং অ্যাজমার মত বিভিন্ন ধরনের সমস্যাগুলো এর মাধ্যমে নিরাময় হয়ে থাকে।

পুষ্টিগুণ জানুনঃ গাব ফলে প্রচুর পরিমাণে পুষ্টিগুণ রয়েছে। গাব ফলে রয়েছে ভিটামিন সি, এবং ভিটামিন বি,ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম এবং ম্যাগনেসিয়াম যা আপনার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করবে এবং হাড় মজবুট করে থাকবে।

হজমের উপকারিতাঃ গাব ফলের আঁশ আপনার হজম প্রক্রিয়াকে উন্নত করবে এবং আপনার কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যাগুলো দূর করবে। 

রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণঃ গাব ফলে উঁচু মাথায় পটাশিয়াম থাকার কারণে, আপনার রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে কার্যকরীনভূমিকা পালন করবে।

আরো পড়ুনঃ দুবাই ক্লিনার ভিসা নতুন নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ ২০২৪

গাব ফল কখন হয়

আমাদের দেশে গাব গাব ফুল সাধারণত ফুটে থাকে ফাল্গুন ও চৈত্র মাসে। গাব ফল পেকে থাকে আষাঢ় এবং শ্রাবণ মাসে। গাব ফল পাকলে অনেক সুস্বাদু এবং মিষ্টি হয়। গাব ফল পাকলে হালকা হলুদ বর্ণের হয় এবং কোষ যুক্ত থাকে। 

দেশি গাব ফলের উপকারিতা 

দেশি গাব ফলে প্রচুর পরিমাণে উপকারিতা রয়েছে। দেশি গাব ফলের উল্লেখযোগ্য উপকারিতা গুলো নিচে দেওয়া হলো। 

  • আপনার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করবে
  • আপনার হজমে সহায়তা করবে 
  • আপনার রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখবে
  • ত্বকের প্রদাহ কমাবে 
  • ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করবে 

লেখকের শেষ মন্তব্য

উপরের আলোচনার মাধ্যমে আপনারা জানতে পারলাম যে গাব ফলের যত উপকারিতা ও পুষ্টিগুণ, গর্ভাবস্থায় গাব ফলের উপকারিতা, গাব খাওয়ার নিয়ম, দেশি গাব ফলের উপকারিতা, গাব গাছের ছাল ও পাতার উপকারিতা, গাবের  পুষ্টিগুণ ইত্যাদি সম্পর্কে। আশা করি পুরো আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়েছেন এবং বুঝতে পেরেছেন। যদি অন্যান্য ফলের তালিকাতে নিয়মিতভাবে গাব ফল খেতে পারেন, তাহলে আপনি বিভিন্ন ধরনের রোগ থেকে মুক্তি পেতে পারেন। উপরের আলোচনায় মাধ্যমে বিস্তারিত ভাবে গাবের উপকারিতাগুলো আলোচিত হয়েছে।


এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

মাহবুব আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন

comment url