সুইডেন যেতে কত টাকা লাগে - সুইডেন কাজের চাহিদা ও বেতন

সুইডেন যেতে কত টাকা লাগে এবং কোন কাজের চাহিদা ও বেতন বেশি, সে সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন? বাংলাদেশ থেকে বহু মানুষ জীবিকার সন্ধানে সুইডেনে পাড়ি দেয়। কিন্তু তাদের অধিকাংশ মানুষে জানে না খরচের পরিমাণ কত হতে পারে। তাই সুইডেনের যাবতীয় তথ্য জানতে নিচে পড়ুন।
সুইডেন কাজের সুযোগ এবং জীবনযাত্রার উচ্চমান এবং মনোরম পরিবেশের কারণে অনেকেই প্রবাস হিসেবে বেছে নিতে চান। কিন্তু দেশটিতে যেতে খরচ কেমন হতে পারে, সে বিষয় নিয়ে দিধায় পড়েন। আপনাদের সুবিধার্থে সুইডেন যেতে কত টাকা লাগে, কাজের চাহিদা ও বেতন সম্পর্কে নিচে তথ্য দিযেছি।

পোস্ট সূচীপত্রঃ সুইডেন যেতে কত টাকা লাগে এবং কাজের চাহিদা ও বেতন কেমন জানতে পড়ুন

সুইডেন ভিসা আবেদন প্রক্রিয়া

আপনি যদি সুইডেন যেতে চান, তবে অবশ্যই আপনার বৈধ ভিসার প্রয়োজন হবে। আপনি সুইডেন কি উদ্দেশ্যে যাবেন, সেই অনুযায়ী আপনাকে সঠিক ভিসা ক্যাটাগরিটা নির্বাচন করতে হবে। আপনি যদি স্টুডেন্ট হন তবে স্টুডেন্ট ভিসা, পর্যটন হলে টুরিস্ট ভিসা এবং আপনি যদি কাজের উদ্দেশ্যে যেতে চান, তবে ওয়ার্ক পারমিট ভিসার জন্য আবেদন করতে হবে। আপনি কোন উদ্দেশ্য সুইডেন যাবেন, তার উপর ভিসা ক্যাটাগরি সিলেট করার পর, আপনার ভিসা ক্যাটাগরি অনুযায়ী প্রয়োজনীয় সকল কাগজপত্র সংগ্রহ করে রাখতে হবে।

সুইডেন ভিসার জন্য যেসব কাগজপত্র লাগে

  1. আপনার ভিসার আবেদনপত্র (অনলাইনে পূরণকৃত)
  2. আপনার পাসপোর্ট (ন্যূনতম ছয় মাস মেয়াদের)
  3. আপনার পাসপোর্ট সাইজের দুটি ছবি
  4. আপনার ভ্রমণ বীমা
  5. থাকার বাসস্থানের প্রমাণ
  6. আপনার ব্যাংক স্টেটমেন্ট
  7. শিক্ষাগত যোগ্যতার সকল প্রমাণপত্র (যদি শিক্ষার্থী হন)
  8. কাজের ছুটির প্রমাণপত্র (যদি চাকুরীজীবী হন)
  9. আপনার কাজের দক্ষতার সার্টিফিকেট
  10. কাজের অফার লেটার (ওয়ার্ক পারমিট ভিসার ক্ষেত্রে)
  11. আপনার কাজের অভিজ্ঞতার সার্টিফিকেট
  12. ভাষা দক্ষতার সার্টিফিকেট (যদি প্রযোজ্য হয়ে থাকে)
  13. পুলিশ ক্লিয়ারেন্স
  14. মেডিকেল সার্টিফিকেট
উপরোক্ত প্রয়োজনীয় সকল কাগজপত্রগুলো আপনার ভিসা ক্যাটাগরি অনুযায়ী আলাদা আলাদা হতে পারে। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে কাগজপত্র একই হয়ে থাকে। আপনার যখন যাবতীয় সকল কাগজপত্রগুলো সংগ্রহ হয়ে যাবে।তখন সুইডেনের মাইগ্রেশন ওয়েবসাইট থেকে আবেদনপত্র ডাউনলোড করে আপনাকে নির্ভুলভাবে পূরণ করতে হবে।আপনার আবেদনপত্রের 

সাথে প্রয়োজনীয় সকল কাগজপত্র গুলো সংযুক্ত করে, আপনাকে আবেদন ফি প্রদান করতে হবে।এরপর আপনাকে আবেদনপত্র এবং প্রয়োজনীয় কাগজপত্র গুলো ঢাকায় অবস্থিত সুইডেনের দূতাবাসে জমা দিতে হবে।সুইডেনের দূতাবাস গুলশান ২ এ রয়েছে । আপনার আবেদনটি সুইডেনের দূতাবাসে যাচাই করবে, তারপর আবেদনটি গ্রহণযোগ্য হলে,আপনাকে

ভিসা দেওয়া হয়। এছাড়া আপনি যদি চান, তবে সেনজেন ভিসার আবেদন করতে পারবেন। কেননা সুইডেন সেনজেনভুক্ত একটি দেশ।

সুইডেনে বেতন কত

সুইডেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের একটি সেনজেনভুক্ত দেশ। আপনারা যারা কাজের উদ্দেশ্য ওয়ার্ক পারমিট ভিসা নিয়ে সুইডেনে যেতে চান। তারা অনেকেই ইন্টারনেটে সার্চ করেন, সুইডেনের বেতন কত সে সম্পর্কে জানার জন্য। সুইডেন দেশটিতে অন্যান্য দেশের তুলনায় বেতনের পরিমাণ একটু বেশি হয়ে থাকে। সুইডেন দেশটিতে সাধারণত ঘন্টা ভিত্তিক চুক্তিতে বেতন নির্ধারণ করা হয়ে থাকে। 
কিন্তু বেতন প্রতি মাসে শেষে দেওয়া হয়। প্রতি সপ্তাহে সাধারণত বেসিক ডিউটি ৪০ ঘণ্টা করতে হয়। ৪০ ঘন্টার উপরে কাজ করলে সেটা ওভারটাইম হিসেবে গণ্য হয়ে থাকে।সুইডেন দেশটিতে শ্রমিকরা গড়ে ৪৮ ঘন্টা কাজ করে থাকেন। সুইডেনে বর্তমানে সর্বনিম্ন বেতন ঘণ্টার প্রতি ১২.২৫ মার্কিন ডলার যা বাংলাদেশী টাকায় কনভার্ট করলে দাঁড়ায় প্রায় ১৩৪৭ 

টাকার মত। তবে আপনি যদি সুইডেনে যেতে পারেন, তবে আপনি প্রতি মাসে সর্বনিম্ন ২ লক্ষ থেকে ২ লক্ষ ১৫ হাজার টাকা পর্যন্ত বেতন পাবেন। তবে বেশিরভাগ সুইডেন প্রবাসী বাঙালিরা ২ লক্ষ থেকে ৩ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ইনকাম করতে পারে।

সুইডেন কোন কাজের চাহিদা বেশি

দেশ অনুযায়ী বিভিন্ন দেশের কাজের চাহিদা সাধারণত আলাদা আলাদা হয়ে থাকে। একেক দেশের কাজের চাহিদা একেক রকম হয়। কোনো দেশের কাজের চাহিদা বেশি আবার কোনো কোনো দেশে কম। আপনারা যারা সুইডেন যেতে চাচ্ছেন কোন কাজগুলো চাহিদা বেশি সেগুলো জানার জন্য ইন্টারনেটে সার্চ করেন। তাই আপনাদের সুবিধার্থে সুইডেনে কোন কাজগুলোর চাহিদা বেশি সেগুলো নিচে উল্লেক করে দেওয়া হলো।

  • হাউজ কিপিং
  • ক্লিনিং
  • ইলেকট্রিশিয়ান
  • ডেলিভারি ম্যান
  • ওয়েল্ডিং
  • প্লাম্বিং
আপনার যদি কাজের উপর দক্ষতা, অভিজ্ঞতা এবং ভাষার উপরে দক্ষতা থাকে তাহলে উন্নত দেশ সুইডেন খুব সহজে কাজ খুঁজে পাওয়া যাবে। এছাড়াও আপনার অভিজ্ঞতা থাকলে আপনার বেতনের পরিমাণ বেশি পাবেন। তাই অবশ্যই সুইডেন যাওয়ার আগে কোন কাজগুলোর চাহিদা বেশি। সেই কাজগুলোর উপরে আপনি অভিজ্ঞতা অর্জন করে যাবেন। তাহলে অল্প সময়ের মধ্যেই আপনি টাকা উপার্জন করে ঘুরে দাঁড়াতে পারবেন। নিচে সুইডেন যেতে কত টাকা লাগে জানুন।

সুইডেন যেতে কত টাকা লাগে

সুইডেনে সবচেয়ে বেশি, পড়াশোনার জন্য শিক্ষার্থীরা যায়। সুইডেন যেতে কত টাকা লাগে সেটা সম্পূর্ণ নির্ভর করবে ভিসা ক্যাটাগরির উপরে। সুইডেনে বর্তমানে বাংলাদেশ থেকে স্টুডেন্ট ভিসা নিয়ে, যারা সুইডেনে যেতে চায় তাদের খরচ পড়বে, আনুমানিক প্রায় ৩ লক্ষ থেকে ৪ লক্ষ টাকা। আপনি যদি নিজে আবেদন না করে, বিভিন্ন এজেন্সির মাধ্যমে যেতে চান,তাহলে

আপনার খরচ পড়তে পারে প্রায় ৮ লক্ষ থেকে ১০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত। আপনি যদি ওয়ার্ক পারমিট ভিসা নিয়ে সুইডেন যেতে চান, তবে আপনার খরচ হবে প্রায় ১২ লক্ষ থেকে ১৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত। তবে আপনি যদি টুরিস্ট ভিসা নিয়ে সুইডেন যেতে পারেন খরচের পরিমাণ কম হবে। বর্তমানে সুইডেন দেশটিতে ভিসা  পাওয়া খুবই কঠিন। বর্তমানে আপনি বাংলাদেশ থেকে 

টুরিস্ট ভিসা নিয়ে যদি সুইডেন যেতে চান তবে আপনার খরচ হতে পারে প্রায় ৫ থেকে ৬ লক্ষ টাকা। সুইডেন দেশটি ইউরোপীয় ইউনিয়নের সেনজেনভুক্ত দেশ হওয়াতে ভিসার দাম বেশি হয়ে থাকে। তবে বিভিন্ন এজেন্সি ভেদে ভিসার খরচ কম বেশি হতে পারে।

সুইডেন জব ভিসা

সুইডেনে কাজ করার জন্য আপনাকে একটি কাজের অনুমতি (Work permit) প্রয়োজন পড়বে। সুইডেন জব ভিসা পাওয়ার ক্ষেত্রে কিছু  শর্তাবলী উল্লেখ করা হলো। 

কাজের প্রস্তাবঃ সুইডেনে আপনাকে প্রথমে একটি বৈধ কাজের প্রস্তাব পেতে হবে। আপনার নিয়োগকর্তা সুইডেনে এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন (EU), ইউরোপীয় অর্থনৈতিক এলাকা (EEA), এবং সুইজারল্যান্ডে কমপক্ষে ১০ দিন ধরে কাজের বিজ্ঞাপন দিতে হবে।
বৈধ পাসপোর্টঃ আপনার অবশ্যই একটি বৈধ পাসপোর্ট থাকতে হবে।
চুক্তিঃ আপনার কাজের নিয়োগকর্তার সাথে একটি চুক্তি থাকতে হবে। নিয়োগকর্তা শিল্পের প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী বেতন ও শর্তাবলী প্রদান করবে।

বীমাঃ আপনার কাজের নিয়োগকর্তাকে আপনার স্বাস্থ্য, জীবন কর্মসংস্থান এবং পেনশন বীমা বাধ্যতামূলক প্রদান করতে হবে। 

সুইডেনের ১ টাকা বাংলাদেশের কত টাকা 

বিনিময় হাড় অনুযায়ী বর্তমানে ১ সুইডিশ ক্রোনা (SEK) প্রায় ১১.৬০ বাংলাদেশী টাকার সমান।

বাংলাদেশ থেকে সুইডেনের দূরত্ব 

বাংলাদেশ থেকে সুইডেনের দূরত্ব প্রায় ৬,৭৪৩ কিলোমিটার।এবং মাইল হিসাবে ৪,১৯০ মাইল।

সুইডেন কেমন দেশ 

সুইডেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের সেনজেনভুক্ত একটি সুন্দর ও উন্নত দেশ। সুইডেন উত্তর ইউরোপের স্ক্যান্ডিনেভিয়ার অঞ্চলে অবস্থিত । সুইডেনের রাজধানীর নাম হলো স্টক হোম যা দেশের বৃহত্তম শহর বলা চলে। সুইডেনের জীবন যাত্রার মান খুবই উন্নত। শিক্ষা, স্বাস্থ্য সেবা এবং সামাজিক সুরক্ষা সব দিক দিয়ে উন্নত।  সুইডেন প্রাকৃতিক দৃশ্যর দিক দিয়ে মনোরম। সুইডেনে বন, হৃদ এবং পাহাড় রয়েছে যেগুলো পর্যটকদের আকর্ষণ করে।  সুইডেন প্রিয় দেশ হিসেবে পরিচিত। প্রযুক্তিগত দিক দিয়ে সুইডেন অনেক এগিয়ে রয়েছে। বড় বড় প্রযুক্তি কোম্পানি গুলোর জন্মস্থান  সুইডেনে।

লেখকের শেষ মন্তব্য

উপরোক্ত আলোচনার মাধ্যমে জানতে পারলাম যে, সুইডেন যেতে কত টাকা লাগে, কোন কাজে চাহিদা ও বেতন বেশি,সুইডেন ভিসার জন্য যেসব কাগজপত্র লাগে , আবেদন প্রক্রিয়া ইত্যাদি সম্পর্কে। আশা করি পুরো আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়েছেন এবং বুঝতে পেরেছেন। আপনি যদি সুইডেন যেতে পারেন তাহলে বেশি টাকা ইনকাম করতে 

পারবেন। তবে আপনাকে অবশ্যই কাজের প্রতি অভিজ্ঞতা ও দক্ষতা অর্জন করে যেতে হবে। সুইডেন সব সময় দক্ষ শ্রমিকদেরকে মূল্যায়ন বেশি করে থাকে। তাছাড়া আপনার যদি কোন কাজের উপর দক্ষতা থাকে, তাহলে সে দেশে সহজেই কাজ খুঁজে পাবেন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

মাহবুব আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন

comment url