বিধবা ভাতা আবেদন অনলাইন
একজন নারীর স্বামী যখন দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়ে যায়, তখন নারীর জীবনে অপূর্ণতা
চলে আসে। আর সেজন্য আর্থিক সমস্যায় পড়তে হয়। সেক্ষেত্রে বিধবা নারীদের আর্থিক
লাঘবের জন্য সরকার কর্তৃক কিছু অর্থ প্রদান করা হয়। কিন্তু কিভাবে আবেদন করবে সে
সম্পর্কে জানে না।যা এই আর্টিকেলটির মাধ্যমে নিচে জেনে নিতে পারবেন।
বিধবা ভাতা আবেদন অনলাইন আপনি ঘরে বসেই আপনার স্মার্টফোন কিংবা কম্পিউটারের
মাধ্যমে করতে পারবেন। সেক্ষেত্রে আপনাকে জানতে হবে আবেদন করার নিয়ম গুলো
সম্পর্কে। যা এই পোস্টের মাধ্যমে আশা করি সহজেই জেনে নিতে পারবেন।
পোস্ট সূচীপত্রঃ বিধবা ভাতা আবেদন অনলাইন জানতে পড়ুন
বিধবা ভাতা কাদের জন্য এবং উদ্দেশ্য কি
বিধবা ভাতা সাধারণত সেসব নারীদের জন্য, যেসব মহিলাদের স্বামী মারা গিয়েছে এবং
দারিদ্র্যতায় জর্জরিত। কোন নারীরে স্বামী যখন মারা যায় তখন এমনিতেই সেই নারীটি
অসচ্ছলতায় পরে যায়। সাধারণত তারাই সরকার কর্তৃক বিধবা ভাতা পেয়ে থাকেন। তবে
আরেকটি বিষয় জেনে রাখতে পারেন, যারা বিশেষে কন্ডিশনে স্বামীর দ্বারা
তালাকপ্রাপ্ত কিংবা কোনো কারণে দুই বছর যাবত খোঁজখবর নেয় না।
তারাও এই ভাতার অন্তর্ভুক্ত হয়ে থাকবেন। বাংলাদেশের সমাজসেবা অধিদপ্তর কর্তৃক
১৯৯৮ সাল থেকে এই সুবিধাগুলো প্রদান করা হযে থাকে। এবং তাদের প্রধান উদ্দেশ্য
হচ্ছে অসহায় বিধবা নারীদের সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিযে আর্থিকভাবে সচ্ছলতা করা।
কিভাবে বিধবা ভাতা আবেদন করতে হয়
বিধবা ভাতা আবেদন আপনি দুটি মাধ্যমে করতে পারবেন। একটি হচ্ছে অনলাইনের মাধ্যমে
ঘরে বসে আবেদন এবং অন্যটি হচ্ছে ইউনিয়ন পরিষদে গিয়ে আবেদন। এছাড়াও আপনি
সমাজসেবা অধিদপ্তরে গিয়েও সরাসরি কথা বলতে পারেন। তবে আবেদনের সবচেয়ে সহজ উপায়
হচ্ছে অনলাইনের মাধ্যমে আবেদন করা। এই আর্টিকেল শেষ পর্যন্ত পড়তে থাকুন, আশা করি
আবেদনের ধাপগুলো সম্পর্কে জেনে নিতে পারবেন।
বিধবা ভাতা প্রাপ্তির শর্তাবলী জানুন
বিধবা ভাতা তারাই পাবেন যাদের স্বামী মারা গিয়েছে। তবে শুধু স্বামী মারা গেলেই
হবে না, আরো বেশ কিছু শর্তাবলী আপনাকে মানতে হবে। শর্তগুলো কি সেগুলো আপনারে
জানার সুবিধার্থে নিচে উল্লেখ করে দেওয়া হচ্ছে। চলুন সেগুলো সম্পর্কে নিচে জেনে
নেই।
- আবেদনকারী যে স্থানে বসবাস করছে, সেখানকার স্থায়ী বাসিন্দা হতে হবে।
- জাতীয় পরিচয়পত্র থাকতে হবে।
- যাদের বয়সের পরিমাণ বেশি, স্বামী ত্যাগ করেছে অনেকদিন যাবত অর্থাৎ দুই বছর খোঁজখবর নেয়নি তারা অগ্রাধিকার পেয়ে থাকবে।
- যারা দুঃস্থ, অসহায়, ভূমিহীন এবং ১৬ বছরের নিচে দুটি সন্তান রয়েছে এমন নারীরাও ভাতা পাওয়ার ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পাবে।
- বিধবা নারীর অবশ্যই বার্ষিক গড় আয় ১২ হাজার টাকা কিংবা তার কম থাকতে হবে।
- বাছাই কমিটির চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সিলেকশন হবে।
বিধবা ভাতা আবেদন অনলাইন
বিধবা ভাতা আবেদন অনলাইন সম্পর্কে জানার জন্য অনেকেই গুগলে সার্চ করে থাকেন।
আপনাদের জানার সুবিধার্থে, আজকের এই আর্টিকেলটির মাধ্যমে আপনারা সহজে কিভাবে
বিধবা ভাতা আবদেন অনলাইনে করবেন সে সম্পর্কে জেনে নিতে পারবেন। তাহলে চলুন কিভাবে
আবেদন করবেন ধাপে ধাপে জেনে নেওয়া যাক।
১ম ধাপঃ ওয়েবসাইটে প্রবেশ করতে হবে
অনলাইনে আবেদন করার ক্ষেত্রে, আপনাকে সমাজ সেবা অধিদপ্তরের অফিসিয়াল
ওয়েবসাইটটিতে প্রবেশ
করতে হবে। তবে ওয়েবসাইটটির কার্যক্রম অনেক সময় বন্ধ থাকে তবে বিচলিত হওয়ার কোন
কারণ নেই!
২য় ধাপঃ ভেরিফিকেশন করতে হবে
- এখন আপনাকে আপনার জন্ম নিবন্ধন নাম্বার কিংবা ভোটার আইডি কার্ডের ১৭ নাম্বার কিংবা স্মার্ট কার্ড থাকলে ১০টি নাম্বার দিয়ে এবং আপনার সঠিক জন্ম তারিখ দিয়ে সাবমিট করে যাচাই অপশনটিতে ক্লিক করতে হবে।
- এরপরে দেখবেন আপনার তথ্যগুলো অটোমেটিক ভাবে ফিলাপ হয়ে যাবে। এখানে যদি কোন মিসিং হয়ে থাকে তাহলে সংশোধন করে দিতে পারেন। এখানে আপনাকে বেশ কিছু তথ্য দেওয়া লাগতে পারে, তথ্যগুলো দিয়ে দিবেন।
এক্ষেত্রে আপনাকে বেশ কিছু তথ্য ফুলফিল করতে হবে সেগুলো জানার জন্য উল্লেখ করে
দেওয়া হচ্ছে।
- বৈবাহিক অবস্থা
- শিক্ষাগত যোগ্যতা
- পরিবারের সদস্য সংখ্যা
- পেশাব বার্ষিক আয়
- স্বাস্থ্যগত বা কর্মক্ষমতা সংক্রান্ত তথ্য
- সরকারি কিংবা বেসরকারি আর্থিক সুবিধা প্রাপ্তীর তথ্য
- বাসস্থানের তথ্য
- ভূমির পরিমাণ
- এই তথ্যগুলো দিয়ে আপনাকে ফরমটি সঠিকভাবে পূরণ করতে হবে।
৩য় ধাপঃ আবেদনকারীর যোগাযোগের ঠিকানা
- আবেদনকারীর যোগাযোগের ঠিকানা অর্থাৎ ভাতা প্রদানের সম্পর্কে কিছু তথ্য দিতে হবে।
- আবেদনকারীর বর্তমান এবং স্থায়ী ঠিকানা
- নিজস্ব বিভাগ,জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড নাম্বার
- মোবাইল ব্যাংকিং একাউন্ট নাম্বার দিতে হবে। বিকাশ/ নগদ কিংবা রকেট।
৪র্থ ধাপঃ আবেদন যোগ্যতা সংক্রান্ত তথ্য দেখুন
- এখন আপনাকে ভাতা প্রাপ্তির ক্ষেত্রে এক এক করে বসিয়ে যেতে হবে। স্পেসিফিক ভাবে প্রতিটা উল্লেখ করার কিছু নেই আপনি যখন দেখবেন নিজের সম্পর্কে তেমনভাবেই ততগুলো দিতে পারেন।
- সবকিছু ঠিকঠাক ভাবে সাবমিট করা হলে, সংরক্ষণ নামক বাটনে ক্লিক করে জমা দিয়ে দিতে পারেন।কিছু সময়ের জন্য আপনাকে অপেক্ষা করতে হবে, তারপর একটি পপ-আপ আসবে, যেখানে প্রিন্ট নামক আর একটি অপশন দেখতে পাবেন।
- Print অপশনটিতে ক্লিক করলে আবেদনপত্রটি ডাউনলোড করে রেখে দিবেন। পরবর্তিতে আপনাকে সমাজ সেবা অধিদপ্তরে গিয়ে জমা দিতে হবে।
বিধবা ভাতা আবেদনের জন্য কি কি ডকুমেন্ট লাগে
বিধবা ভাতা আবেদনের জন্য অবশ্যই কিছু কাগজপত্র লাগবে। তাহলে কি কি ডকুমেন্টগুলো
লাগবে, সে সম্পর্কে নিচে জেনে নেওয়া যাক।
- জাতীয় পরিচয় পত্রের ফটোকপি
- স্বামীর মৃত্যু সনদের ফটোকপি
- সাম্প্রতিক তোলা পাসপোর্ট সাইজের ছবি
- বিধবা ভাতা আবেদন ফরমটি পূরণ করে জমা
এগুলো থাকলেই আপনি সহজে বিধবা আবেদন করতে পারবেন।
বিধবা ভাতা আবেদন ফরম
বিধবা ভাতা আবেদন ফরমটি আপনি চাইলে ডাউনলোড করে কিংবা প্রিন্ট আউট করে হাতে লিখে
জমা দিতে পারেন। আপনাদের আরো সহজ করে দেওয়ার জন্য, বিধবা ভাতা আবেদন ফরম কিভাবে
পাবেন নিচে দেখুন।
বিধবা ভাতা আবেদন ফরম pdf: এখানে ক্লিক করতে পারেন
FAQ'S
ভিধবা ভাতা কত মাস পর পর দোয়া হয়?
- বিধবা ভাতা প্রতি ৩ মাস পর পর একত্রে তিন মাসের ভাতা প্রদান করা হয়।
বিধবা ভাতা কত টাকা?
- বিধবা ভাতা ৫৫০ টাকা করে দেওযা হয়ে থাকে, তবে সময়ের সাথে সাথে পরিবর্তন হতে পারে।
বিধবা ভাতা কত সালে চালু হয়?
- বিধবা ভাতা চালু হয় ১৯৯৮-৯৯ অর্থ বছরে।
লেখকের শেষ মন্তব্য - বিধবা ভাতা আবেদন অনলাইন সম্পর্কে
উপরোক্ত আলোচনার মাধ্যমে জানতে পারলেন যে, বিধবা ভাতা কাদের দেওয়া হয়ে থাকে,
বিধবা ভাতা আবেদন কিভাবে করতে হয়, বিধবা ভাতা আবেদন অনলাইন এবং বিধবা ভাতা
আবেদনের জন্য কি কি কাগজপত্র লাগে ইত্যাদি সম্পর্কে। আশা করি পুরো আর্টিকেলটি শেষ
পর্যন্ত পড়ে সহজেই বুঝতে পেরেছেন, বিধবা ভাতা আবেদন অনলাইন কিভাবে করবেন সে
সম্পর্কে।
মাহবুব আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন
comment url