স্বপ্নের পদ্মা সেতু রচনা ১০০০ শব্দ
স্বপ্নের পদ্মা সেতু বাঙালি প্রতিটি মানুষের কাছে স্বপ্ন বা আবেগের বহিঃপ্রকাশ।
আপনারা প্রায় অনেকেই ১২০০ শব্দে স্বপ্নের পদ্মা সেতু রচনা সম্পর্কে জানতে চান,
আজকের এই আর্টিকেলটির মাধ্যমে আশা করি নিচে জেনে নিতে পারবেন মনোযোগ সহকারে পড়তে
থাকুন।
স্বপ্নের পদ্মা সেতু বাংলাদেশের অর্থনীতির একটি বড় অবদান মনের মনে করা হয়।
কেননা পদ্মা সেতুটি দক্ষিণ পশ্চিম অঞ্চলের ১৯টি জেলাকে রাজধানী ঢাকার সঙ্গে
সরাসরিভাবে যুক্ত করেছে। স্বপ্নের পদ্মা সেতু রচনা সম্পর্কে অনেকেই জানতে চান, যা
নিচে জেনে নিতে পারবেন।
পোস্ট সূচীপত্রঃ স্বপ্নের পদ্মা সেতু রচনা ২০২৫ জানতে পড়ুন
স্বপ্নের পদ্মা সেতু
পদ্মা সেতু বাংলাদেশের সবচেয়ে খরস্রোতা ও প্রসস্ততম নদী যা বাংলাদেশের একটি
অভাবনীয় এক কীর্তি এবং নতুন এক "ব্র্যান্ডিং নেশন" হিসাতে পরিচিত। পদ্মা সেতু
বাংলাদেশের দক্ষিণ পশ্চিম অঞ্চলের সঙ্গে উত্তর পশ্চিম অঞ্চলের সাথে যোগাযোগ সংযোগ
ঘটিয়েছে। পদ্মা সেতু বাংলাদেশের নিজস্বভাবে নির্মিত যা খুলে দিয়েছে নতুন
সম্ভাবনা আর অবারিত দুয়ার। যার ফলে উন্নত সুখময় হচ্ছে মানুষের জীবনযাত্রার মান।
বাংলাদেশের মানুষের উদ্যম ও সক্ষমন্ত্র হচ্ছে পদ্মা সেতু। পদ্মা সেতু বাংলাদেশের
মানুষের কাছে গৌরব, অহংকার এবং আত্মমর্যাদার প্রতীক।
পদ্মা সেতু নির্মাণের প্রেক্ষাপট
বাংলাদেশের বুক চিরে বয়ে চলে গিয়েছে অসংখ্য নদ-নদী ও খাল বিল। যার ফলে যাতায়াত
ব্যবস্থার জন্য প্রতিনিয়তই নদী পথের সাহায্য নিতে হয়। আর যাতায়াত ব্যবস্থাকে
সহজ করার জন্যই প্রয়োজন পরে সেতুর। পদ্মা নদী হচ্ছে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় নদী।
আর এই দীর্ঘতম নদী পারাপারে মানুষের দুঃখ, কষ্ট ও দুর্ভোগের কোন সীমা ছিল না। আর
সেজন্য দীর্ঘদিন
ধরে পদ্মা পাড়ের মানুষের অর্থাৎ বাংলাদেশের দক্ষিন পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের পদ্মা
সেতু নির্মাণের বিভিন্ন দাবি করেছিল আসছিলেন। পরবর্তীতে সেতুর সম্ভাবনার কথা
বিবেচনা করে ১৯৯৮ সালে পদ্মা সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। সমীক্ষা
যাচাইয়ের পরে ২০০১ সালে পদ্মা সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়। কিন্তু
অর্থায়নের যোগান সৃষ্টি না হওয়ার ফলে কাজ
স্তগিত হয়ে যায়। পরবর্তীতে আবার ২০০৯ সালের পদ্মা সেতুর প্রকল্প বাস্তবায়নে
তৎপরতা শুরু হয়। এবং নিজস্ব অর্থায়নে শেষ পর্যন্ত পদ্মা সেতু নির্মাণ সফল হয়
বাংলাদেশ।
পদ্মা সেতু অর্থায়নে জটিলতা
২০১১ সালে অউঈঙগ এর নকশাতে পদ্মা নদীর উপরে পদ্মা বহুমুখী সেতুর কাজ শুরুর কথার
ছিল ২০১১ সালে এবং কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০১৩ সালে। প্রস্তাবিত পুরো প্রকল্পের
প্রস্তাবিত ব্যয় করা হয়েছিল ২৯২ কোটি ডলার। পদ্মা সেতু নির্মাণে বিশ্বব্যাংক,
এডিবি, জাইকা, আইডিবি ও আবুধাবি ডেভেলপমেন্ট গ্রুপের ঋণ সহায়তা দেওয়ার কথা
থাকলেও
পরবর্তীতে পরামর্শক নিয়োগে অর্থাৎ দূর্নীতির অভিযোগে ২৯ জুন ২০১২ সালে ১২০ কোটি
ডলার ঋণ বিশ্বব্যাংক বাতিল করে দেয়। পরবর্তীতে অন্যান্য সহযোগী সংস্থাগুলোও এই
প্রকল্প থেকে পিছিয়ে যায়। যার ফলে পদ্মা সেতুর ভাগ্যটা অর্থাৎ দক্ষিণ
পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের ভাগ্যটা অনিশ্চিত হয়ে যায়। আর এর ফলে কিছু সময়ের জন্য
দেশের মানুষ দুঃখ, ক্ষোব আর হতাশায় নিমজ্জিত হয়ে পড়ে।
পদ্মা সেতু নির্মাণে প্রধানমন্ত্রীর সাহসী সিদ্ধান্ত
পদ্মা সেতু নির্মাণের স্বপ্ন দেখা এবং বাস্তবায়নের রুপকার প্রধানমন্ত্রী শেখ
হাসিনার সাহসী ও সংগ্রামী লড়াই করে, বাংলার মানুষের বেঁচে থাকার প্রত্যয়দীপ্ত
নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণে বাংলাদেশের মানুষ ঘুরে দাড়িয়েছে। বিশ্ব
ব্যাংকের ষড়যন্ত্রের কথা বুঝতে পেরে বাংলাদেশের মানুষসহ ঘুরে দাঁড়িয়েছে
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বঙ্গবন্ধু কন্যা বাংলাদেশের সাবেক
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু প্রকল্প বাস্তবায়নের
জন্য তেজোদীপ্ত কন্ঠে ঘোষণা দিলেন। তাই সিদ্ধান্ত নিঃসন্দেহ বলাই যায় এ সময়ের
জন্য সময়উপযোগী এবং অনন্য ও সাহসী উদ্যোগ।
পদ্মাসেতুর রূপরেখা
পদ্মা সেতু হচ্ছে বাংলাদেশের দীর্ঘতম সেতু এবং এই সেতু নকশা প্রণয়ন করেছেন
AECOM. এটি মূলত মুন্সিগঞ্জ জেলার মাওয়া প্রান্ত থেকে সরীয়তপুর জেলার জাজিরা
প্রান্তে সংযোগ করেছে। দ্বিতল এই সেতুটি সম্পূর্ণভাবে কংক্রিট ও স্টিল দিয়ে তৈরি
করা হয়েছে। পদ্মা সেতুর উপর দিয়ে চলছে যানবাহন এবং নিচ দিয়ে চলছে ট্রেন। ৪ লেন
বিশিষ্ট পদ্মা সেতুর দৈর্ঘ্য
হচ্ছে ৬.১৫ কিলোমিটার এবং সেতুটির প্রস্থ হচ্ছে ২২ মিটার। সেতুটির দুই প্রান্তে
ভায়াডাক্ট হচ্ছে ৩.১৮ কিলোমিটার এবং সংযোগ সড়ক হচ্ছে ১২ কিলোমিটার। পদ্মা নদীর
দুই পাড়ে নদী শাসনের কাজ করা হয়েছে ১৪ কিলোমিটার।পদ্মা সেতুর মোট পিলার সংখ্যা
৪২টি মোট স্প্যান সংখ্যা ৪১টি এবং মোট পাইলিং সংখ্যা ২৬৪টি এবং উচ্চতা হচ্ছে ১৮
মিটার। পদ্মা সেতু
নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান হচ্ছে চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কন্সট্রাকশন
কোম্পানি লিমিটেড। পদ্মা সেতুর ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেছিলেন সাবেক
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৪ জুলাই ২০০১ সালে। সেতুটির মূল কাজ শুরু করা হয়েছিল
২০১৪ সালে ২৬ নভেম্বর এবং শেষ হয়েছিল ২০২২ সালের ২৩ জুন। পদ্মা সেতুটি শুভ
উদ্বোধন করেছিলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০২২ সালের ২৫ জুন এবং সেতুটির
উপর দিয়ে যানবাহন চলাচল শুরু হয়েছিল ২৬শে জুন ২০২২।
পদ্মা সেতুর গুরুত্ব
পদ্মা সেতু বাংলাদেশের অর্থনীতিতে বড় একটি অবদান রাখছে। পদ্মা সেতু বাংলাদেশের
দক্ষিণ পঞ্চগড়-পশ্চিমঅঞ্চলের ১৯টি জেলাকে রাজধানী ঢাকার সঙ্গে সরাসরিভাবে যুক্ত
করেছে। আর এর ফলে ব্যবসা-বাণিজ্য পর্যটন, শিক্ষা এবং স্বাস্থ্যসেবা সহ বিভিন্ন
ক্ষেত্রে প্রতিনিয়তই উন্নতি ঘটছে। এছাড়া পদ্মা সেতু হওয়ার ফলে
দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের জীবনযাত্রার মানেরও উন্নতি হয়েছে।পদ্মা সেতুর ফলে
দক্ষিণ পশ্চিম অঞ্চলের অর্থনীতি প্রসারিত করছে এবং এর ফলে কৃষি জল, বিদ্যুৎ,
গ্যাস সরবরাহ করছে। পদ্মা সেতু হওয়ার ফলে দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের পর্যটন শিল্পেরও
উন্নতি হয়েছে।
পদ্মা সেতুর নির্মাণ ব্যয়
পদ্মা সেতু নির্মাণ করার জন্য প্রথমে ১০ হাজার ২৬২ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়েছিল।
পদ্মা সেতু নির্মাণ ২০১১ সালে ২০ হাজার ৫০৭ কোটি ২০ লক্ষ টাকায উন্নত করে একনেকে
অনুমোদন পায়। পরবর্তীতে আবারো ২০১৬ সালে ৮ হাজার ২৮৬ কোটি টাকা ব্যয় বৃদ্ধি পায়।
পদ্মা সেতু নির্মাণে সর্বশেষ আরো ১ হাজার ৪০০ কোটি টাকা বেড়ে গিয়ে মোট ব্যয়
দাঁড়ায় ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি টাকা।
পদ্মা সেতুর ভিবিষ্যৎ
পদ্মা সেতুর ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য সম্ভাবনাময়। কেননা পদ্মা সেতু
হওয়ার ফলে দূরত্ব কমছে এবং বাংলাদেশে ১৯ টি জেলার সঙ্গে রাজধানীর সাথে যোগাযোগ
সংযোগ স্থাপিত হয়েছে। যার ফলে ব্যবসা বাণিজ্য থেকেই শুরু করে পর্যটন, শিক্ষা,
স্বাস্থ্য সেবায় বিভিন্ন দিক দিয়ে উন্নতি ঘটছে এবং মানুষের জীবনযাত্রারও উন্নযন
ঘটেছে।
লেখকের শেষ মন্তব্য
পদ্মা সেতু বাংলাদেশীদের জন্য অভূতপূর্ব একটি অর্জন। পদ্মা সেতু হওয়ার ফলে দেশের
বিভিন্ন জেলার সাথে সংযোগ স্থাপিত হয়েছে এবং অর্থনৈতিক সক্ষমতা বেড়েছে। পদ্মা
সেতু হওয়ার ফলে ঘুরে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশ। আপনারা যারা পদ্মা সেতু সম্পর্কে
জানার জন্য বিভিন্ন মাধ্যমে খোঁজাখুঁজি করেছেন, আশা করি আজকের এই আর্টিকেলটির
মাধ্যমে সঠিক তথ্য গুলো জানতে পেরেছেন।এতক্ষণ ওয়েবসাইটের সাথে থাকার জন্য
ধন্যবাদ।
মাহবুব আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন
comment url